বাবাকে হত্যার পর রক্ত ধুয়ে বের হয় ছেলে

বকুল আহমেদ
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
বনিবনা না হওয়ায় দুই সন্তান নিয়ে স্ত্রী বাবার বাড়িতে থাকেন। আদরের প্রথম সন্তান ইফতেখার আলম সুমনের একাকিত্বে সঙ্গী হন বৃদ্ধ বাবা নুরুল আলম। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক সুমনকে নিয়ে রাজধানীর আদাবরের শেখেরটেকের ভাড়া বাসায় ভালোই চলছিল নুরুল আলমের। কিন্তু তিন মাস নিয়মিত অফিসে যাচ্ছিলেন না সুমন। গত ১৩ এপ্রিল কেন এমন করছে, কৈফিয়ত চেয়ে বকাবকি করেন বাবা। এতেই বিগড়ে যান এবং ছুরি এনে জন্মদাতার শরীরে উপর্যুপরি আঘাত করেন সুমন। শুধু তাই নয়, রক্তাক্ত বাবাকে ঘরে রেখে নিজের শরীরের রক্ত ধুয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি।
নুরুল আলম খুনের ঘটনায় রাজধানীর আদাবর থানা পুলিশের তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টও এসেছে। শিগগিরই সুমনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোমিন খান।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সুমন দীর্ঘদিন ধরে মানসিক বিকারগ্রস্ত। নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল। ঠিকমতো ওষুধ সেবন না করলে সমস্যা বেড়ে যেত। ঘটনার পরপরই পুলিশ সুমনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। চাকরি থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সুমনের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। নুরুল আলম খুনের ঘটনায় মামলা করেন সুমনের ভাই শহিদুল আলম। তিনি সমকালকে বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ভাইয়ের মানসিক সমস্যা। চিকিৎসা চলছিল এবং বাসায় তাঁর সঙ্গে বাবা থাকত। বাবার কথায় রেগে গিয়ে তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন।’
পুলিশ জানায়, সুমন বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক। হত্যাকাণ্ডের তিন মাস আগে থেকে তিনি অফিসে অনিয়মিত। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের মহাখালী কার্যালয়ে সপ্তাহে একদিন; কখনও দুই সপ্তাহে একবার যেতেন।
বাসায় থাকতেন বেশির ভাগ সময়। ছেলের এ অবস্থা দেখে বাবা নুরুল আলম তাঁকে অফিসে যেতে প্রায়ই চাপ দিতেন। এসব তিনি ভালোভাবে নিতেন না। গত ১৩ এপ্রিল অফিস না যাওয়ার কারণ জানতে চেয়ে নুরুল আলম বকাবকি করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ছুরিকাঘাত করেন সুমন। এ সময় এলোপাতাড়ি লাথিঘুষিও মারেন। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় বাবাকে ঘরে রেখে শরীরের রক্ত ধুয়ে-মুছে বেরিয়ে পড়েন। যাওয়ার সময় নিচে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক বাসা ভাড়া চাইলে তাঁর সঙ্গে বাজে ব্যবহার ও মারধর করেন তিনি। বিষয়টি বাড়ির মালিককে জানান তত্ত্বাবধায়ক। পরে দুজন মিলে সুমনের বাজে আচরণের বিষয় বাবাকে জানাতে বাসায় গিয়ে নুরুল আলমকে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় পান। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় এবং সুমনকে গ্রেপ্তার করে।
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ইউসুফ আলী জানান, ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় সুমনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আদালতের রায়ের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুমন নিয়মিত অফিস করতেন না। এজন্য তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।’
- বিষয় :
- বাবাকে হত্যা