‘মাদকসেবীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি’

শ্যামলীতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৬:৫২ | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৬:৫৭
দীর্ঘদিন ইয়াবা সেবনের কারণে আসক্তদের মধ্যে বিষণ্ণতা দেখা দিচ্ছে। আর নারী মাদকাসক্তরা পুরুষদের তুলনায় মানসিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি।
শনিবার রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসা নারীদের তথ্য সংগ্রহের কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৩২২ জন নারীর মধ্যে ১৭৭ জনের আত্মহত্যার ভাবনা ছিল। এর মধ্যে ৯৮ জন কখনও না কখনও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। পাঁচজন চিকিৎসা নেওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন। আর ১৭৭ জন আত্মহত্যাপ্রবণ নারীর মধ্যে ১২২ জন মাদকাসক্ত ছিল। তাদের মধ্যে ১৬৩ জনের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে এবং ৭৪ জন কমপক্ষে একটি মানসিক রোগ ছিল।
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা, মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তি এবং আত্মহত্যার উচ্চ ঝুঁকি’ বিষয়ে তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূলপ্রবন্ধ তুলে ধরেন ঢাকা আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস মজুমদার। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের মাদক ব্যবহারের ধরন পরিবর্তন হয়েছে এবং ইয়াবার সহজলভ্যতার কারণে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইয়াবা উত্তেজক মাদক হিসেবে পরিচিত যা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা বেশি ব্যবহার করছে। দীর্ঘদিন ইয়াবা ব্যবহারে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা রোগ দেখা দেয়। এই বিষণ্ণতার কারণেও ইয়াবা আসক্তদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সাধারণ জনগণের তুলনায় অ্যালকোহল ব্যবহারকারীরা ১০ গুণ বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর যারা শিরায় নেশাদ্রব্য গ্রহণ করে তারা ১৪ গুণ বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হলো আত্মহত্যা। বিশ্বের মোট আত্মহত্যার ৬০ শতাংশ হয় এশিয়াতে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বিশ্বে আত্মহত্যা মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬ জন, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩২ জন মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। করোনা মহামারির সময় ১৪ হাজার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে এবং ২০২২ সালে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে মূল আলোচক ছিলেন কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রের মনোচিকিৎসক বিশেষজ্ঞ ডা. রাহেনুল ইসলাম। এছাড়াও প্রশ্নোত্তর ও আলোচনা করেন প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সাইকোলজিস্ট রাখী গাঙ্গুলী ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপক ফারজানা ফেরদৌস।