ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের পক্ষে অঙ্গীকার লেখক শিল্পীদের

সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের পক্ষে অঙ্গীকার লেখক শিল্পীদের

ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে সমাবেশ। ছবি-সমকাল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৭:৩২ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৭:৩২

লেখক, শিল্পী, শিক্ষক ও সাংবাদিকরা সকল সময়ে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার পক্ষে এবং মত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত ও ভোটাধিকার হরণ করার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার অঙ্গীকার করেছেন। শনিবার বিকেলে রাজধানী শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ হয়।

এ সময় শপথ বাক্য পাঠকালে মানবাধিকারকর্মী রাখাল রাহা বলেন, ভোট হলো নাগরিকের মত প্রকাশের সর্বোচ্চ রূপ। ভোটাধিকার ছাড়া মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে পারে না। তাই যে দলই রাষ্ট্র পরিচালনা করুক, লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-সাংবাদিকরা কখনও ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিপক্ষে যেতে পারেন না। তাই তারা ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একত্র হয়েছেন।

সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দিল্লীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ নরেন্দ্র মোদি বাইডেনের সঙ্গে সভা করেছেন, শেখ হাসিনা বাইডেন-মোদির সঙ্গে হাস্যমুখে ছবি তুলেছেন। কোন নীতির দিকে যাবে, সহিংসতার-ভয়ংকর রকমের নিপীড়নের দিকে যাবে নাকি বাংলাদেশের মানুষ শ্বাস ফেলার জায়গা পাবে, সেটা নির্ধারণ হচ্ছে দিল্লিতে। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা। বাংলাদেশের ভাগ্য কেন দিল্লিতে, বেইজিংয়ে, ওয়াশিংটনে কিংবা মস্কোতে নির্ধারণ হবে? মত প্রকাশ ও ভোটাধিকারের আন্দোলন কার্যত বাংলাদেশের ভাগ্যকে ওয়াশিংটন কিংবা বেইজিং থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার আন্দোলন।

তিনি বলেন, উন্নয়ন মানে মানুষের শিক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসা, অধিকার এবং নিরাপত্তা। সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশের ওপর তার মালিকানা, দেশের ওপর তার কর্তৃত্ব; এটা হলো আসলে উন্নয়ন। কিন্তু বর্তমান সরকার উন্নয়নের যে ধর্ম দেখাচ্ছেন, রূপ ও ঝলমলে জিনিস দেখিয়ে নিজের স্বৈরতন্ত্র জায়েজ করতে চাচ্ছেন। বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা পাচার করা— এটাকে উন্নয়ন বলে মানুষের সামনে হাজির করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ছিল। আইয়ুব খান, এরশাদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বমূলক ভূমিকা ছিল। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষক কিছুদিন পরপর স্বৈরতন্ত্র, লুন্ঠন, সম্পদ পাচারের পক্ষে বিবৃতি দেয়। এস আলম গ্রুপের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, সামিট বাংলাদেশের সম্পদ পাচার করে সিঙ্গাপুরের অন্যতম ধনী, ট্রানজিট করে ভারতকে বন্দর, সড়ক সব দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, রাশিয়াকে খুশি করার জন্য ভয়ংকর পারমাণবিক প্রকল্প করা হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়া হচ্ছে এগুলোর বিরুদ্ধে এ শিক্ষকদের দাড়াতে দেখি না।

আমাদের জীবন দুর্বিষহ হচ্ছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন আরও দুর্বিষহ হবে। এখান থেকে মুক্তি পেতে হলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে বলে জানান তিনি।

নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবীর বলেন, সার্বজনীন ভোটাধিকারের জন্য মানুষ আঠারো শতকে লড়াই করেছে। আজকে এত বছর পর আবার সেই দাবি করতে হয় এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পৃথিবীতে লজ্জাজনক ঘটনা। সরকার থেকে একদিকে বলছে তাদের সময়ে সুন্দর ভোট হয়েছে অথচ দশবছর মানুষ ভোটাধিকার বঞ্চিত। অন্যদিকে যখন লুটপাট, ডাকাত চলছে সেগুলোকে উন্নয়ন নামে আমাদের গেলাতে চাচ্ছে, আমরা সেরকম নির্বোধ নই। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়। আমাদের দাবি সবার জন্য নির্বিশেষে বিবেক চিন্তার ও ভোটাধিকারের স্বাধীনতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলো একই দাবি জানিয়েছে তবে তাদের সঙ্গে আমাদের একটি গুণগত পার্থক্য আছে৷ তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, নানান ভাবে বাক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করেছে। তারা গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের কথা বলছেন, যতদিন পর্যন্ত আমাদের স্বার্থের সঙ্গে মিল থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের সংহতি জ্ঞাপন করছি। আজকে দেশের মানুষের প্রতি কোনো পক্ষের আস্থা নেই। ক্ষমতায় থেকে যাবার জন্যে অথবা ক্ষমতায় ফিরে যাবার জন্য সব পক্ষই কোনো না কোনো দেশের তাবেদারি করে বেড়ায়। এটার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করা দরকার।  

লেখক হেলাল মহিউদ্দীন বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনে আমার শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীরা কোনো কথা বলেননি। তারা ভেবেছেন সময় হলে বলব। সেই সময় আর আসেনি। তার আগেই তাদেরকে কিনে ফেলা হয়েছে। আমাদের কিনে ফেলা সম্ভব, আমাদের মধ্যবিত্তের এরকম শ্রেণিচরিত্র আছে। সেই সুযোগ পেয়ে তারা (ক্ষমতাসীন সরকার) বেপরোয়া, কোনোকিছুই মানতে চাচ্ছে না। দুনিয়ার যত বাধাবিপত্তি আছে তারা কেয়ারই করছে না। কারণ আমরা তখন কোনো কথা বলিনি। এভাবে আমাদের বোবা করে ফেলা হয়েছে। এখনও যদি আমরা কথা না বলি, দেশটি বসবাসযোগ্য থাকবে না।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট এহসান মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি জ্ঞাপন করে উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, মোহাম্মদ আজম, সামিনা লুৎফা প্রমুখ। আরও বক্তব্য দেন উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক ও পরিবেশকর্মী মাহা মির্জা, কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম, প্রগতি লেখক সংঘের শামসুজ্জামান ভুঁইয়া, লেখক ও কবি ফিরোজ আহমেদ, কবি আহসান হাবীব, কবি সৈকত আমিন, কবি হাসান জামিল, আদর্শ প্রকাশনীর মাহবুব রহমান।

আরও পড়ুন

×