ভবন থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মী নিহত, সাংবাদিককে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ

মোহাম্মদপুর থানা। ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৯:১২ | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২১:২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে ভবন থেকে পড়ে প্রীতি উড়ান (১৫) নামে এক কিশোরী গৃহকর্মী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি অন্য কিছু সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গৃহকর্তা দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকসহ ছয়জনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল সমকালকে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে মৃত্যুর সঠিক কারণ।’
পুলিশ সূত্র জানায়, শাহজাহান রোডের জেনেভা ক্যাম্প সংলগ্ন ২/৭ নম্বর ভবনের নবম তলায় আশফাকুল হকের বাসায় কাজ করত প্রীতি। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সে ওই বাসার জানালা থেকে নিচে পড়ে যায়। অচেতন অবস্থায় তার রক্তাক্ত নিথর উদ্ধার করে নেওয়া হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।’
পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গৃহকর্তাসহ ছয়জনকে মোহাম্মদপুর থানায় নেওয়া হয়েছে। অপর পাঁচজন হলেন–গৃহকর্ত্রী তানিয়া খন্দকার, তাঁর মেয়ে আফরিন হক, ছেলে সৈয়দ আনাফ মাহমুদ, তানিয়ার বোন রাজিয়া খন্দকার ও তাঁর স্বামী আল রাজি মাহবুব।
এদিকে কিশোরীর মৃত্যুতে এলাকার কিছু লোক বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে এর বিচার চান। এ বিষয়ে গৃহকর্তার পরিবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। তবে স্থানীয় কয়েকজন বলেছেন, ঘটনার আগে তারা মেয়েটিকে গ্রিলবিহীন জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। একটু পর কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে তারা এগিয়ে যান। তখন মেয়েটির রক্তাক্ত নিথর দেহ নিচে পাওয়া যায়।
পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার আজিজুল হক জানান, মৃত প্রীতির বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানার মিত্তিংগা গ্রামে। তার বাবার নাম লোকেশ উড়ান। স্বজনদের বিষয়টি জানিয়ে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। তারা এলে এ বিষয়ে আরও জানা যাবে বলে মনে করছে পুলিশ।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে গত বছরের ৪ আগস্ট ওই বাসা থেকে ফেরদৌসী নামে এক শিশু গৃহকর্মী নিচে পড়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। দীর্ঘ চিকিৎসায় সে সেরে ওঠে।
পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় আহত শিশুটির মা জোসনা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। তাতে আসামি ছিলেন গৃকর্তা ও গৃহকর্ত্রীসহ তিনজন। ওই মামলার তদন্ত শেষে গৃহকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। তবে ছয় মাসের ব্যবধানে একই বাসা থেকে আবারও গৃহকর্মীর পড়ে যাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। তাই ঘটনার সময় বাসায় উপস্থিত পরিবারের সদস্য ও বেড়াতে আসা স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতের স্বজনরা মামলা করলে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে।
- বিষয় :
- গৃহকর্মী
- মোহাম্মদপুর