ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা

অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ বন্ধ, চরম আর্থিক সংকটে মালিক ও কর্মচারীরা

অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ বন্ধ, চরম আর্থিক সংকটে মালিক ও কর্মচারীরা

.

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪ | ২১:২৫ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪ | ২১:২৯

# ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে বিভিন্ন সংস্থা
# বন্ধ রেস্তোরাঁগুলো দ্রুত খুলে দিতে হবে
# সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০টি
# সব রেস্তোরাঁকে এক সংস্থার অধীনে নিতে হবে
 

অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ খাতে নৈরাজ্য চলছে মন্তব্য করে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেছেন, বন্ধ করে দেওয়া রেস্তোরাঁগুলোর মালিকরা যেমনি সমস্যায় আছেন তেমনি চরম আর্থিক সংকটে পড়ছেন এ খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধ রেস্তোরাঁগুলো দ্রুত খুলে দিতে হবে। অন্যথায় প্রতীকী হিসেবে এক দিনের জন্য সারাদেশে রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ রাখা হবে।

আজ সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সম্প্রতি বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ খাতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টির প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে ইমরান হাসান বলেন, রেস্তোরাঁয় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসন্ন রমজান ঈদের আগে চলতি মাসের বেতন-ভাতাদি ও বোনাস দিতে হবে। রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকলে রেস্তোরাঁর মালিক কীভাবে বেতন-ভাতা দেবে। আইনি নোটিশ, গ্রেপ্তার ও প্রতিষ্ঠান বন্ধের মাধ্যমে রেস্তোরাঁ খাতে যে অবিচার চলছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সংকট উত্তরণে কোনো নির্দেশনা না দিয়ে গ্রেপ্তার ও রেস্তোরাঁ বন্ধের মাধ্যমে কোনো সুফল বয়ে আসবে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের বরাতে তিনি বলেন, সারাদেশে রেস্তোরাঁ রয়েছে চার লাখ ৮১ হাজারের বেশি। যেখানে কর্মরত রয়েছেন ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে আট শতাধিক রেস্তোরাঁ বন্ধ আছে। অভিযানে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০টি। অনেকে ভয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিচ্ছেন। অভিযানের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। 

ইমরান বলেন, সিলিন্ডারের কারণে শ্রমিক কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক ডকুমেন্টস থাকা সত্ত্বেও রাজউক তার অনধিকার চর্চা করছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ৬ মাস আগে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু বিনা নোটিশে ভাঙচুর করে রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে খাতটি ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে। 

তার মতে, রাজউকের এফ-১ ও এফ-২–এর নামে যে নৈরাজ্য চলছে, তা কোনোভাবেই কাম্য না। কমার্শিয়াল স্পেসে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করা যাবে। রাজউকের ২০২২-২০৩৫ সাল পর্যন্ত ড্যাপেও ব্যবসায়ীদের ভবনের মিশ্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে।

সরকারি পদ্ধতির জটিলতার কারণে লাইসেন্স নেওয়া সময় সাপেক্ষ ও জটিল বিষয় উল্লেখ করে এ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী বলেন, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সরকারে কাছে আবেদন জানিয়ে ছিল দেশের সব রেস্টুরেন্ট সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স দিতে। কারণ, লাইসেন্স করতে হলে এমন কিছু ডকুমেন্ট চাওয়া হয় যা বাস্তবসম্মত নয় বা প্রদান করাও সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, সরকার ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে। বাণিজ্যিক হারে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল নিচ্ছে। পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা চলছে, এত দিন অনিয়ম দেখলো না? এখন কোনো নোটিশ না দিয়ে ভেঙে ফেলছে, বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা অমানবিক।

সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি কয়েকটি দাবি জানায়। তার মধ্যে রয়েছে, অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা, টাস্কফোর্স নির্দিষ্ট একটি এসওপি তৈরি করবে। সব রেস্তোরাঁ সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স দিতে হবে। পবিত্র রমজান মাসে সিলগালা নাটক বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ২০ মার্চ মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর সমীপে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। 

আরও পড়ুন

×