ঈদযাত্রায় সদরঘাটে এবারও যাত্রীখরা
নৌপথে ঘরে ফেরা

পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। সাধারণত এই সময়ে ঘরে ফেরা মানুষের চাপে সদরঘাটে পা ফেলার জায়গা থাকে না। তবে এবারের চিত্রটা একেবারেই আলাদা ফোকাস বাংলা
ইমরান হুসাইন
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৪ | ০১:২৩ | আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৬:৩৫
ঈদ কেন্দ্র করে এবারও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীখরা চলছে। লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকদিনে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা আশানুরূপ নয়। পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় কয়েকটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
সকালে চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী পন্টুনে কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। তবে সূর্য মধ্যাকাশে গড়ানোর আগেই এ ভিড় গায়েব। বিকেলে যাত্রীদের বেশির ভাগই বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাগামী লঞ্চগুলোতে ভিড় করেন। পটুয়াখালী, বগা, ইলিশা রুটেও যাত্রীদের কমবেশি উপস্থিতি দেখা যায়। তবে বেশ কম যাত্রী ছিল বরিশাল রুটে। এ রুটে ছয়টি লঞ্চ যাওয়ার কথা থাকলেও যাত্রী সংকটে গতকাল তিনটির যাত্রা বাতিল করা হয়। যাত্রীরা জানান, পর্যাপ্ত লঞ্চ ও বেশি ভিড় না থাকায় তারা অনেকটা আরাম করেই বাড়ি ফিরতে পারছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত ঈদের মতো এবারও লঞ্চে কেবিনের চাহিদা বেশি।
স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য কেবিন প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে বেশ কিছু লঞ্চের অনেক কেবিন খালি যাচ্ছে। ঢাকা থেকে ঝালকাঠিগামী সুন্দরবন-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার মুশফিকুর রহমান জানান, ঈদ সামনে রেখে সদরঘাটে স্বাভাবিকের চেয়ে যাত্রী কিছুটা বেড়েছে। তবে তা আশানুরূপ নয়। লঞ্চের টিকিটের জন্য মরিয়া চেষ্টা, জায়গা না পেয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে যাওয়া– এসব দৃশ্য আর নেই। আশা, আগামী ক’দিনে যাত্রী বাড়বে।
ঈদ উপলক্ষে লঞ্চে ভাড়া কিছুটা বেড়েছে। ডেকের ভাড়া ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছে
৪০০। সিঙ্গেল কেবিনে ২০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ২০০ এবং ডাবল কেবিনে ৪০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে। ঝালকাঠিগামী লঞ্চের এক যাত্রী শফিকুল ব্যাপারি বলেন, ভাড়া আগের তুলনায় বেশি নেওয়া হচ্ছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য লঞ্চ বেছে নিয়েছেন। তবে কেবিনের ভাড়া একটু কম রাখলে ভালো হতো।
ঢাকা থেকে বরিশালগামী পারাবত-১২ লঞ্চের ম্যানেজার বাবুল হোসেন বলেন, লঞ্চে আগের মতো চাপ নেই। কিন্তু গত কয়েকদিনে যাত্রী কিছুটা বেড়েছে। মানুষ বাসে যাত্রা করে; পদ্মা সেতু দিয়ে অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
পটুয়াখালীগামী যাত্রী সুমন আলম বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন। ভাড়া সামান্য বেশি দিয়ে কেবিন নিয়েছেন। বাসে টিকিট পাননি। তাই লঞ্চে এসেছেন। একটু দেরি হলেও কিছু করার নেই।
মিরপুর থেকে ভোলা যাওয়ার উদ্দেশে পরিবারসহ সদরঘাটে আসেন গফুর উদ্দীন। তিনি জানান, লঞ্চে ভিড় কম হবে ভেবে আগে থেকে কেবিন বুকিং করেননি। এসেই টিকিট পেয়েছেন। আগের মতো চাপ নেই।
ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সুরভী-৯ এর সুপারভাইজার আব্দুর রউফ জানান, যাত্রী আগের তুলনায় একটু বেড়েছে। কিন্তু তা প্রত্যাশার চেয়ে কম। বরিশালের উদ্দেশে শনিবার ছয়টি লঞ্চ যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে শুভরাজ, পারাবত-১২, অ্যাডভেঞ্চার-৯ গেছে। কেবিন সংখ্যার অর্ধেক বুকিং হওয়ায় সুরভী ৯, মানামী, সুন্দরবন-১৫-এর যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় যাত্রী বেড়েছে। কিন্তু আগের মতো চাপ নেই। আশা করছেন, আগামীতে যাত্রী বাড়বে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহসভাপতি বদিউজ্জামাল বাদল সমকালকে বলেন, যাত্রী একেবারেই কম। লঞ্চ ডেক বেশির ভাগ খালি যাচ্ছে। বড় লঞ্চগুলোর আরও বিপদ। লঞ্চের ব্যবসা শেষ। তেলের দামই উঠছে না।
সদরঘাট নৌ থানার ওসি আবুল কালাম সমকালকে বলেন, পুলিশ, র্যাবসহ আনসার সদস্যরা যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। সাদা পোশাকেও অনেকে দায়িত্ব পালন করছেন। যাত্রীর চাপ বাড়লে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। নৌ পুলিশ ঘাটে ও লঞ্চ– উভয় স্থানে কাজ করছে।
- বিষয় :
- ঈদ যাত্রা
- সদরঘাট
- লঞ্চ টার্মিনাল