ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

লঞ্চের রশি ছিঁড়ে নিহত ৫

বিল্লালের ‘সুখের ঘর’ এখন শুধুই স্মৃতি

বিল্লালের ‘সুখের ঘর’ এখন শুধুই স্মৃতি

মো. বেলাল (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা (২৪) এবং তাদের চার বছর বয়সী মেয়ে মাইশা। ছবি: সংগৃহীত

সাহাদাত হোসেন পরশ ও মোক্তার হোসেন

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ১৯:৩৩ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ | ০৭:০৪

টানাপোড়েন ছিল। তবে চার বছরের সন্তান মাইশা ও স্ত্রী মুক্তাকে নিয়ে সুখের কমতি ছিল না বিল্লালের (৩০) ঘরে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গাজীপুরের গাছার বড় বাড়ি এলাকায় থাকতেন। ফুটপাতে বিক্রি করতেন জামা-কাপড়। কখনোবা কসমেটিকস সামগ্রী। জীবন চলছিল আনন্দেই। সেই আনন্দে আজ (বৃহস্পতিবার) ঈদের ঢেউ লেগেছিল। কিন্তু ঈদের দিনটি শেষ হতে না হতেই পরিবারটি এখন শুধুই স্মৃতি আর বেদনার নাম।

ঈদের দিন রাজধানীর সদরঘাটে পন্টুনে বাঁধা লঞ্চের রশি ছিঁড়ে দুর্ঘটনায় যে পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন তাদের তিনজন এই বিল্লালের পরিবারের। মো. বেলাল (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা (২৪) ও তাদের মেয়ে মাইশা বাদে নিহত অপর দুজন হলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের তরুণ রবিউল (১৯) এবং পটুয়াখালীর রিপন হাওলাদার (৩৮)।

বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে ১১ নং পন্টুনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নৌপুলিশের সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ নিহতের সংখ্যা ও পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। 

বিল্লালের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যেতে সদরঘাটের লঞ্চঘাটে এসেছিলেন তারা। পন্টুনে দাঁড়িয়ে লঞ্চে ওঠার অপেক্ষা করছিলেন। বিল্লালের কোলে ছিল ছোট্ট মাইশা। আরেক হাতে স্ত্রী মুক্তার হাত ধরা ছিল। হঠাৎ লঞ্চের সঙ্গে পন্টুনে বাঁধা মোটা রশি ছিঁড়ে যায়। এতে রশির আঘাতে পন্টুনের ওপরই ছিটকে পড়েন কমপক্ষে সাত থেকে আটজন। মুহূর্তে রক্তে ভেসে যায় পন্টুন। মর্মান্তিক মৃত্যু হয় পাঁচজনের।

রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহাজারি করছিলেন বিল্লালের বোন-জামাই মো. মিজান। তিনি বলেন, ‘আমাদের পোড়া কপাল! যাত্রীর তোলার পাল্লাপাল্লিতে সর্বনাশ হয়ে গেল। এই দুর্ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

তিনি বলেন, ‘ছোট্ট মাইশাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। কত আনন্দ করবে! কীসের আনন্দ, কীসের ঈদ! গোটা পরিবারই চলে গেল। ছোট ভাইয়ের কাছে দুর্ঘটনার খরব পাই। সদরঘাট ছুটে গিয়ে দেখি রক্তে সব ভেসে গেছে। এরপর হাসপাতাল মর্গে এসেছি।’

দুর্ঘটনায় নিহত রিপন হাওলাদার (৩৮) নামে আরেকজনের ভাগ্নে-জামাই আবুল কালামও হতবাক। পন্টুনে বসে কান্নাকাটি করছিলেন। ফোনে স্বজনকে বলছিলেন, ‘আমাদের সব শেষ। তোরা কোথায় আছিস? সদরঘাটে চলে আয়। লাশ কাটাছেড়া করে কী হবে? যত দ্রুত সম্ভব মরদেহ বাড়ি নিতে চাই। আমরা গরিব মানুষ। হৃদয়বান কেউ সহযোগিতা করলে পরিবারটা হয়ত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে সদরঘাট নৌপুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘাটে বাঁধা টিপু-১৩ ও তাশরিফ-৪ লঞ্চের মাঝ দিয়ে ঢুকতে যায় ফারহান-৬ নামে একটি লঞ্চটি। এ সময় ফারহান ধাক্কা দেয় টিপুকে। আর টিপুর ধাক্কায় তাশরিফের রশি ছিঁড়ে যায়। এতে রশির আঘাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। 

আরও পড়ুন

×