ঈদের পরদিন বিনোদন কেন্দ্রে প্রচণ্ড ভিড়

ছবি-সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩:৩০ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫:১৭
ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছে সাত বছরের লামিয়া। বাবার হাত ধরে ঘুরে ঘুরে দেখছিল বাঘ, হরিণ, বানর। উচ্ছ্বসিত লামিয়া বলছিল, প্রথমবারের মতো চিড়িয়াখানায় এলাম। বাঘ দেখেছি, জিরাফ দেখেছি, জেব্রা দেখেছি, বানর দেখেছি। হাতিও দেখেছি। আরও অনেক অনেক পাখি দেখেছি। অনেক অনেক ভালো লাগছে।
ঈদের পরদিন শুক্রবার দুপুরের আগেই মিরপুর চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড়। এবারের ঈদ আর বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে টানা ছয়দিন ছুটি থাকায় এই ভিড় স্মরণকালের রেকর্ড ছাড়াবে বলেই মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। একই অবস্থা হাতিরঝিল, আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম, ধানমণ্ডি লেক, আঁগারগাওয়ের শিশুমেলাসহ অন্য বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও। তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে সকাল থেকেই মানুষ ছুটছেন ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে।
সরেজমিন এসব বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ের এমন চিত্র। ঈদের পরদিন শুক্রবার সকাল নয়টায় মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রধান ফটক খুলে দেওয়া হয়। চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। তবে নয়টার অনেক আগে থেকেই দর্শনার্থীদের আগমন শুরু হয়। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে টিকেট কাউন্টার খোলার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। টিকেট বিক্রি শুরু হওয়া মাত্রই হুড়মুড় করে টিকেট কাটতে শুরু করেন অনেকেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুরের আগেই দর্শনার্থীর সংখ্যা অর্ধলাখের ঘরে পৌঁছে গেছে। ভেতরে প্রবেশ করে পশু-পাখি দেখে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন তারা।
শুধু ঢাকা নয়, আশপাশের জেলাগুলো থেকেও ঈদ আনন্দ উপভোগে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে আসছেন অনেক দর্শনার্থী। মাদারীপুর থেকে আবুল হাসেম সপরিবারে এসেছেন মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায়। তার ভাষ্য, ঈদের কারণে সড়ক-মহাসড়ক অনেকটাই ফাঁকা। ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ও পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে স্বল্প সময়ে পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসেছি। চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখতে ভালোই লাগছে।
এদিকে, ঈদের দিন জাতীয় চিড়িয়াখানায় অনাকাঙ্খিত ঘটনায় হাতির পাড়ায় একজন মাহুতের ছেলের অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর পর সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানো হয়েছে। বাঘ ও হাতির খাঁচার নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও শক্ত করা হয়েছে। পুলিশ ও আনসারের প্রহরা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি খাঁচার সামনে চিড়িয়াখানার কর্মীদের চিড়িয়াখানা খোলা থাকা পর্যন্ত অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। এসব কর্মী দুর্ঘটনা এড়াতে বিশেষ করে তুলনামূলক হিংস্র প্রাণীদের খাঁচাগুলোর খুব কাছাকাছি কাউকে ঘেষতে দিচ্ছেন না। কর্মকর্তারাও কিছু সময় পরপর পরিস্থিতি দেখে যাচ্ছেন।
চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার সমকালকে জানান, ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীর ভিড় ব্যাপক বাড়ার কারণে আগে থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। ঈদের দিনের দুর্ঘটনার পর এই নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। বাঘ ও হাতিসহ কয়েকটি প্রাণির খাঁচা ও নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও মজবুত করা হয়েছে। তারপরও সার্বক্ষণিক নজরদারির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে গোটা এলাকায়।
এবারের ঈদে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর সংখ্যা গত কয়েক বছরের তুলনায় বাড়বে বলেও মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। রফিকুল ইসলাম তালুকদার যেমনটি বলছিলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় আসেন। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৫০ হাজারে। আর ঈদের দিন ৮০ হাজার থেকে একলাখ দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেলেও ঈদের পরদিন সেটা অনেক বেড়ে যায়। এবার ঈদের পরদিন দুই লাখের মতো দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় আসবেন বলে আমরা আশা করছি।
প্রায় অভিন্ন চিত্র আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমেও। ঢাকার প্রান্তবর্তী এই বিনোদনকেন্দ্রেও ঈদেও ছুটিতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেছে। সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর ছুটছেন সেখানে। সেখানে ঈদ ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে সব রাইড ও ওয়াটার কিংডম (সুইমিং পুল) ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি প্যাকেজে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে বিশেষ খাবারও দেওয়া হচ্ছে। ফলে ফ্যান্টাসি কিংডমের সব রাইড একসঙ্গে চড়ার সুযোগ মিলছে ১২৫০ টাকায়। একই পরিমাণ টাকায় ওয়াটার কিংডম ব্যবহারের সুযোগ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। আর তিনটা রাইডসহ ওয়াটার কিংডম ব্যবহার করা যাবে ১৫৫০ টাকায়। অনেক সেলিব্রিটিদেরও রাখা হয়েছে দশনার্থীদের বাড়তি পাওনা হিসেবে। আর পহেলা বৈশাখের দিনটিতে থাকবে বাউল সঙ্গীতের আসর।
সপরিবারে ফ্যান্টাসি কিংডমে আসা মিরপুরের আবদুস সালাম বললেন, কর্মব্যস্ততার কারণে সারা বছর সুযোগ না মিললেও ঈদের ছুটিতে ফ্যান্টাসি কিংডমে এসেছি। ভালো অফারও আছে দেখলাম। সব মিলিয়ে খুবই আনন্দ লাগছে।
হাতিরঝিলেও সকাল থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে এসেছেন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরসহ সব শ্রেণির মানুষ। তবে বিকেলের দিকে এই ভিড় আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। মানুষ ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন। ঈদ উপলক্ষে হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘুরতে খরচ করতে হচ্ছে জনপ্রতি ৮০ টাকা। এছাড়া বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে হেঁটেও বেড়াচ্ছেন অনেকে।
তবে জাতীয় শিশুপার্কে উন্নয়ন কাজের জন্য বন্ধ রয়েছে কয়েক বছর ধরেই। না জেনে সেখানে আসা অনেক দর্শনার্থী ফিরে যাচ্ছেন।
- বিষয় :
- ঈদুল ফিতর ২০২৪