আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলে এখন পানির প্রবাহ

দখল দূষণমুক্ত হওয়ায় দৃশ্যমান আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল। শনিবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকার চিত্র সমকাল
লতিফুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪ | ০০:২৬
কয়েক বছর আগেও আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল ছিল ময়লার ভাগাড়। বর্ষায়ও এর চেহারা চেনা যেত না। হেঁটে পার হওয়া যেত অনায়াসে। ময়লার স্তূপের মধ্যেই খেলত শিশুরা। কিন্তু এখন সেই অবস্থা আর নেই। বর্জ্য পরিষ্কার ও খননের পর বদলে গেছে এই চ্যানেলের চেহারা; ফিরেছে পানির প্রবাহ।
কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। একসময় এর পুরোটাই ছিল দখলদারদের কবজায়। পরিণত হয়েছিল ময়লার ভাগাড়ে। ২০০৭ সালে সরকার এই চ্যানেলের জায়গা খাস দেখিয়ে একটি সরকারি সংস্থার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সুশীল সমাজ ও স্থানীয়দের বাধার কারণে পরে ওই উদ্যোগ থেকে সরে আসে। এরপর চ্যানেলটি পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করার কাজে হাত দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২০২২ সালের জুনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল সংস্কারকাজ উদ্বোধন করেন।
‘আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার ও নান্দনিক পরিবেশ’ শীর্ষক এই কার্যক্রমের আওতায় চ্যানেল থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার টন বর্জ্য, পলি ও অন্যান্য আবর্জনা অপসারণ করা হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় দুই তীরের ৭০টি অবৈধ স্থাপনা। পুনর্খননের আগে খালটির প্রশস্থতা ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুট, যা এখন হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ ফুট।
ডিএসসিসি কর্মকর্তারা জানান, এই কাজে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। চ্যানেলটি ঘিরে উন্নয়ন কার্যক্রমের মহাপরিকল্পনা গ্রহণে কাজ করছে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এর দুই তীরে ১৪ কিলোমিটারে নান্দনিক পরিবেশ, হাঁটার পথ ও সাইকেল লেন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। হাতিরঝিলের আদলে এখানে তিনটি সেতু হবে।
স্থানীয় ‘নৌকাবাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক রাসিম মোল্লা বলেন, ‘আদি বুড়িগঙ্গায় আবার পানির প্রবাহ ফিরবে, এটি ছিল কল্পনার বাইরে। এটিকে উন্মুক্ত ডাস্টবিন বানানো হয়েছিল। রাঘববোয়ালরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন সব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে। বর্জ্য পরিষ্কার ও পুনর্খননের পর এতে পানির প্রবাহ ফিরেছে।’ তিনি বলেন, ‘আদি চ্যানেলের দুই তীরে এখন ওয়াকওয়ে, সবুজায়নসহ দৃষ্টিনন্দন পরিবেশের প্রতীক্ষায় আমরা।’
সৈয়দ রিফাত বলেন, ‘২৫ বছর এ এলাকায় বাস করি। কারা কীভাবে আদি চ্যানেল দখল করেছিল, তা কাছে থেকে দেখেছি। একসময় ধারণা হয়েছিল, এটি হয়তো আর দখলমুক্ত হবে না। কিন্তু সেটি হয়েছে।’
আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনর্খনন ও নান্দনিকতা তৈরির দায়িত্বে আছেন ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খায়রুল বারেক। তিনি বলেন, ‘পুনর্খনন উদ্বোধনের দিন মনে হয়েছিল, হয়তো সরু একটি চ্যানেল বের হবে। অথবা কিছু আবর্জনা পরিষ্কারের পর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে; কিন্তু তা হয়নি। আদি চ্যানেল এখন দৃশ্যমান।’
এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সমকালকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আদি বুড়িগঙ্গায় পানির প্রবাহ ফিরেছে। তাতে বুড়িগঙ্গা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। এখন নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করব। মানুষ যাতে বুড়িগঙ্গার তীরে এসে উপভোগ্য পরিবেশ পায়।’ আদি বুড়িগঙ্গা ও চারটি খালে নান্দনিক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে ঢাকা নবরূপ পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
- বিষয় :
- বুড়িগঙ্গা