ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মিরপুর কমার্স কলেজ

শ্রেণিকক্ষে দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয় জুবায়ের

শ্রেণিকক্ষে দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয় জুবায়ের

নিহত কলেজছাত্র জুবায়ের। ছবি: সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ০১:১৪

ঢাকার মিরপুর কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র জুবায়ের হাসান রাফিতকে সহপাঠী চৌধুরী রাজিন ইকবাল (১৮) বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। এর পর সন্ধ্যায় রাজিন ও তার বাবা ইকবাল আহম্মেদ চৌধুরী কলেজছাত্র জুবায়েরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ বাসায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় বাবা ও ছেলে। নিহতের স্বজনরা এ তথ্য জানিয়েছেন। 

শনিবার রাতে রাজিনদের বাসা থেকে পুলিশ জুবায়েরের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আবুল বাশার মিয়া বাদী হয়ে রোববার শাহ আলী থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এতে রাজিন ও তার বাবা ইকবালকে আসামি করা হয়েছে। রোববারই রাজিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

পুলিশ জানিয়েছে, বঁটি দিয়ে কুপিয়ে জুবায়েরের শরীর ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। 

শাহ আলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। 

নিহতের মামা মো. নুরুজ্জামান সমকালকে জানান, ৯ মাস আগে মিরপুর কমার্স কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় জুবায়ের। এ কারণে শাহ আলীর রাইনখোলায় বাসা ভাড়া নেন তিনি। জুবায়ের শনিবার বেলা ১১টায় বাসা থেকে বের হয়ে চিড়িয়াখানা রোডে কোচিং করতে যায়। 

জুবায়েরের সহপাঠীদের বরাত দিয়ে নুরুজ্জামান বলেন, কোচিং সেন্টারের ভবনের সামনে রাজিন দাঁড়িয়ে ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টায় কোচিং শেষ করে জুবায়ের নিচে নেমে আসে। এ সময় রাজিন তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। বেলা আড়াইটায় জুবায়ের বাসায় না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করি। সে মোবাইল ফোন ব্যবহার করত না। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে কমার্স কলেজের পাশে লাল বিল্ডিং এলাকায় রাজিনদের বাসায় গিয়ে দেখি, আমার ভাগনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। 

হত্যার কারণ সম্পর্কে স্বজনরা জানান, জুবায়ের মেধাবী ছাত্র। সে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল। তিন মাস আগে কলেজে তাকে ‘ক্লাস ক্যাপ্টেন’ করা হয়। মাসখানেক আগে রাজিন শ্রেণিকক্ষে এক সহপাঠীকে মারধরের চেষ্টা করলে জুবায়ের বাধা দেয়। এতে রাজিন ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ধাক্কা দেয়। জুবায়ের বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালে অধ্যক্ষ আবু মাসুদ শিক্ষার্থী রাজিন ও তার বাবা ইকবালকে কলেজে ডেকে বিষয়টি মিটমাট করে দেন। ছেলের উচ্ছৃঙ্খলতা নিয়ে ইকবালকে কথা শোনানো হয় ওই বৈঠকে। এতে বাবা-ছেলে দু’জনই জুবায়েরের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এর জেরেই তাকে বাসায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। 

তবে শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীকে রাজিনের মারতে যাওয়ার ঘটনা জানেন না বলে দাবি করেছেন কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ আবু মাসুদ। 

তিনি বলেন, কলেজে শিক্ষার্থীদের কোনো ঝামেলার বিষয় শৃঙ্খলা কমিটি দেখভাল করে। শৃঙ্খলা কমিটিকে আমি জিজ্ঞাসা করেছি; তারা রাজিনের বাবাকে কলেজে ডাকেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, কমার্স কলেজের পাশে হাউজিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোয়ার্টারের তিনতলায় ছেলে রাজিনকে নিয়ে থাকতেন ইকবাল। তাঁর স্ত্রী চাকরিসূত্রে ঢাকার বাইরে থাকেন। শনিবার রাজিন ও তার বাবা বাসায় ছিলেন। সন্ধ্যায় ওই বাসায় জুবায়েরকে হত্যা করা হয়। ওই ভবনের একজন জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন করে ঘটনাটি পুলিশকে জানান। এর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এর আগেই রাজিন ও ইকবাল পালিয়ে যান।

রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে জুবায়েরের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নেওয়া হয়। 

আরও পড়ুন

×