ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া

মাইকে উস্কানি দিয়ে মানুষকে ক্ষেপানো হয়

মাইকে উস্কানি দিয়ে মানুষকে ক্ষেপানো হয়

ছবি: সংগৃহীত

 অমিতোষ পাল

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪ | ১০:৩০ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪ | ১০:৪১

কোটা আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগং রোড পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকা ছিল উল্লেখযোগ্য। শুরুতে ওই এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি থাকলেও আন্দোলন যতই গতি পেয়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে নাশকতা। পাশাপাশি কমেছে শিক্ষার্থী উপস্থিতি।

এক পর্যায়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীর বদলে আন্দোলনের ‘চালকের আসনে’ বসে যায় হাজার হাজার অচেনা মানুষ। পুরো এলাকা চলে যায় তাদের নিয়ন্ত্রণে। অভিযোগ আছে, ওই এলাকার অনেক মাদ্রাসা থেকে দেওয়া হয় উস্কানি। এতে সাধারণ মানুষও হয়ে ওঠে বিক্ষুব্ধ, নেমে আসে রাস্তায়। 

সেখানে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার মতো ঘটনাও ঘটে। এক দিন পর সেই পুলিশ সদস্যের লাশ উদ্ধার করতে সমর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীদের জঙ্গি কায়দায় তাণ্ডব চালাতে দেখা যায়। তাদের হাতে ছিল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় মাদকাসক্ত, চোর, ছিনতাইকারীসহ অসংখ্য সুবিধাভোগী। বিক্ষোভের ফাঁকে তারা সড়কের দু’পাশে দেদার লুটপাট চালায়। যাত্রাবাড়ী থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে থাকা সব সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে তছনছ করা হয়। লোহা-লক্কড়, গাড়ির যন্ত্রপাতিও তারা খুলে নিয়ে যায়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, দলীয় কোন্দলের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত এক হয়ে বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তাদের নেতা পর্যায়ের কাউকে মাঠে দেখা না গেলেও নেপথ্যে মদদ দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বিপরীতে আওয়ামী লীগে বিভাজন থাকায় তারাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামেনি। নামতে গিয়ে বরং মার খেয়ে ঘরে ঢুকে যেতে হয়েছে অনেককে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও তাদের সহযোগিতা পায়নি।

নাশকতা-তাণ্ডবের নেপথ্যে আওয়ামী লীগের বিরোধ

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনে (ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলীর অংশবিশেষ) আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে মসিউর রহমান মোল্লা সজল তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। সেই থেকে দু’জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ দুটি বলয়ে বিভক্ত।

মসিউর রহমান মোল্লা সজল এমপি বলেন, গত ১৭ জুলাইও কিছু শিক্ষার্থী মাঠে ছিল। দুপুরের পর থেকে রাস্তায় সব অচেনা মানুষ। তারা ছিল হিংসাত্মক। প্রথমদিকে আমি যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা হাইওয়েতে অবস্থান নিই। মির্জাবাড়ি থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকা ছত্রভঙ্গ করে দিই। এর পর বিক্ষোভকারীরা আমার মিছিলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হাতে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। যারা তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা আমাদের এলাকার কেউ নয়। মুহূর্তের মধ্যে নাশকতার কাজে লেগে পড়ে  হাজার হাজার মানুষ। জামায়াত ও বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নেপথ্যে ইন্ধন দিল। সাইনবোর্ড, রায়েরবাগ এলাকায় অনেক নতুন মাদ্রাসা আছে। নতুন বাড়িঘর হয়েছে। সেখান থেকে তারা বেরিয়ে আসে। 

যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না বলেন, যারা নাশকতা করেছে, তারা মূলত বিএনপি-জামায়াতের লোক। আমাদের এলাকায় তো অনেক মাদ্রাসা। এরা ছাত্রদের আন্দোলনের কাঁধে ভর করে এ কাজ করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষার বিষয়ে কিছু বলাও যায় না। এর আড়ালে তারা একরকম সংগঠিত হয়েছে, এটা আমাদের দুর্বলতা। আমাদের আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন আছে। সেই সুযোগটাই বিএনপি-জামায়াত নিয়েছে। 

‘বিএনপির ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত মাতুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শান্ত নূর খান শান্ত বলেন, এ আন্দোলনে বিভিন্ন জায়গা থেকে শিবিরের ১০ হাজার ক্যাডার আনা হয়েছে। এখানে সাড়ে তিনশর মতো মাদ্রাসা আছে। বিএনপির সালাউদ্দিনের ছেলে রবিন এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের সমন্বয়হীনতা। বিপরীতে ওরা অর্গানাইজড হয়ে কাজ করেছে। আমরা কয়েকবার চেষ্টা করছি। কিন্তু ওরা এত লোকজন, বোঝেন না। কদমতলী এলাকায় পুলিশ মেরে ব্রিজের পাশে ঝুলিয়ে দিয়েছে। এক দিন পর সেই লাশ নিতে হয়েছে। 

কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডিএসসিসির ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক বলেন, ‘মাতুয়াইলে নাশকতা প্রতিরোধ করতে গিয়ে আমার একজন কর্মী মারাও গেছেন। আমাদের এখানে আওয়ামী লীগের দু-তিনটি গ্রুপ আছে। এ রকম ভাগ হয়ে গেলে ওদের ১০০ জন আমাদের ২০০ জনের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। 

আরও পড়ুন

×