ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ছাত্রহত্যায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করে তদন্ত দাবি উদীচীর

ছাত্রহত্যায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করে তদন্ত দাবি উদীচীর

প্রেসক্লাবের সামনে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করে উদীচী। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪ | ১৭:৩৭

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটাপদ্ধতি সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দায় সরকার এড়াতে পারে না বলে মনে করে উদীচী। জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত করে এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে উদীচী। 

আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক সমাবেশে এসব কথা বলেন উদীচীর নেতারা। 

সমাবেশস্থলের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি প্রতীকী কফিন রাখা হয়। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। সঞ্চালনা করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এতে বক্তব্য দেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, প্রবীর সরদার, জামসেদ আনোয়ার তপন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, ছাত্রনেতা এনামুল হাসান অনয়, শ্লোগান কন্যাখ্যাত লাকী আক্তার প্রমুখ। 

সমাবেশে বক্তারা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো একটি শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে নজিরবিহীন দমন-পীড়ন, নির্বিচারে ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ করেছে রাষ্ট্র। প্রথমে ছাত্রলীগ ও পরে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি ও সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করে নির্বিচারে দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের দায় কোনোভাবেই সরকার এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তারা। বলেন, শুরু থেকেই এ আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও মূলত সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিবেচনাহীন ও উসকানিমূলক মন্তব্য, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর লেলিয়ে দেওয়াসহ নানা কারণে আন্দোলন এখন ভিন্ন মাত্রা ধারণ করেছে। 

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাধারণ মানুষ যখনই কোনো ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিয়োজিত হন, গণতন্ত্রের কথা বলা হয়, যখনই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে জনগণ তখনই তাদেরকে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। তাই, যারা আজ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন তারা রাজাকার, নাকি যারা এ মন্তব্য করেছে তারাই রাজাকার সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানান তিনি। 

সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের দায় কাঁধে নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের পদত্যাগ করা উচিত। এই সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার রাখে না বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, যখনই মানুষ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে, তখনই কোনো না কোনো ইস্যুকে সামনে এনে মানুষের মনোযোগ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল। বারবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করছে। 

উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন এবং বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটির আন্দোলনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ের পরপরই সরকার চাইলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে পারতো। কিন্তু এখন এটিকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও উদীচী মনে করে, সরকারের উচিত বাহাত্তরের সংবিধানকে পূর্ণাঙ্গরুপে প্রতিষ্ঠা করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। 

সমাবেশে সমবেত গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন— ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা’, ‘মানব না এই বন্ধনে, মানব না এই শৃঙ্খলে’, ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ প্রভৃতি গান। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পী শাওন ও মীর সাখাওয়াত এবং লাকী আক্তার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর বাচিক শিল্পী সৈয়দা রত্না, মনীষা মজুমদার, শাহিদা ফাল্গুনী ও সানাম খান।

আরও পড়ুন

×