ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

চলমান সংকট নিরসনে ৬ দফা প্রস্তাব সচেতন নাগরিক সমাজের

চলমান সংকট নিরসনে ৬ দফা প্রস্তাব সচেতন নাগরিক সমাজের

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪ | ২২:৩৮ | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২৪ | ০১:১৭

চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ। এতে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যারা চিহ্নিত হয়েছে তাদের বাইরে অন্য সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা এবং নিহতের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও সংকট নিরসনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত এক বছরের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, নিহতদের তালিকা প্রকাশ, আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধান বের করা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। 

রোববার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক বিবৃতিতে বিচারক, অধ্যাপক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক বিশিষ্টজন এ প্রস্তাব দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন আরম্ভ করলেও দ্রুত এতে তৃতীয় শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে এবং ছাত্রদের একটি ন্যায়সঙ্গত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সংঘাত, হত্যা ও সন্ত্রাসের দিকে নিয়ে যায়। এই আন্দোলন মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারের কতিপয় মন্ত্রীর অবিমৃষ্য মন্তব্য, আন্দোলন দমনের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়াবাড়ি এবং গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতার দায় সরকার এড়াতে পারে না। এক মাসের আন্দোলনে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হওয়া এবং কয়েক হাজার আহতের ঘটনা কোনো অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না। আজও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। 

বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় পক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় বহু কোটি টাকার সরকারি সম্পদ ধ্বংস হলেও হতাহতের যেসব মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটেছে, যেভাবে শত শত পরিবারের স্বপ্ন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও জীবিকা ধ্বংস হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে তা কখনও পূরণ করা যাবে না। সরকার যখন আন্দোলনকারীদের মূল দাবি মেনে নিহত ও আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছে, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির অঙ্গীকার করে উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করেছে, যখন গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের জামিনে মুক্তির প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে, তখন জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে কোটা আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী তৃতীয় পক্ষ সরকার পতনের লক্ষে এক দফা দাবি সামনে এনে ছাত্রদের একটি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে সহিংস রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত করেছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে অবধারিতভাবে এখানে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ হবে এবং আমাদের যাবতীয় অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। আমরা মনে করি, দেশ ও জাতির এই মহাদুর্যোগকালে আন্দোলনকারী ও সরকারকে আলোচনায় বসে দাবি পূরণের প্রক্রিয়া খুঁজে বের করতে হবে। সরকার পরিবর্তন যদি আন্দোলনকারীদের প্রধান উদ্দেশ্য হয় সেটা হতে হবে সাংবিধানিকভাবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, সংঘাত, সন্ত্রাস ও অমূল্য প্রাণহানির মাধ্যমে নয়।

প্রস্তাবগুলো হলো-

১. কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ দ্রুত সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে আপনাদের অন্যান্য ন্যয়সঙ্গত দাবিপূরণের পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিন। বাংলাদেশের অস্তিত্বের স্বার্থে তৃতীয় পক্ষের হয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া থেকে বিরত থাকুন। আমরা কোনো অবস্থায় ছাত্র বা সম্ভাবনাময় তরুণদের হাতে অস্ত্র দেখতে চাই না।

২. কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরকারকে দ্রুত প্রকাশ করতে হবে এবং এসব মৃত্যুর জন্য যে বা যারা দায়ী যথাযথ তদন্ত ও বিচার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৩. কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহত ও আহত সব ব্যক্তিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৪. সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তারদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করুন। তবে এই ঘোষণা জেল ভেঙ্গে পলাতক জঙ্গি সন্ত্রাসী কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের জন্য চিহ্নিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

৫. বন্ধ করা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত খোলার ব্যবস্থা করুন এবং ক্যাম্পাসসমূহের যাবতীয় নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করুন।

৬. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্ততপক্ষে এক বছরের জন্য ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং মানসম্পন্ন শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

বিবৃতিদাতারা হলেন

শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, শিল্পী হাশেম খান, মহিলা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. ফওজিয়া মোসলেম, বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, আরণ্যকের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্যজন মামুনুর রশীদ, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, রিজিওনাল এন্টি টেররিস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.), হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মানবাধিকার নেতা কাজল দেবনাথ, প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এডভোকেট রাণা দাস গুপ্ত, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে, জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড-এর নির্বাহী সভাপতি আবৃত্তিশিল্পী মোঃ শওকত আলী, শহীদজায়া সালমা হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী আবুল বারক আলভী, কথাশিল্পী ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, বীরমুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবেদ খান, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, মানবাধিকার নেতা উষাতন তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, সমাজকর্মী মালেকা খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সঙ্গীতশিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূ-তত্ত্ববিদ মো. মকবুল-এ ইলাহী চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্ত্তী জুয়েল, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী কাজী কামাল ইকরাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর, লালন সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন, প্রফেসর ড. ইফতেখারউদ্দিন চৌধুরী, ডা. ইকবাল কবীর, অধ্যাপক মো. আলমগীর কবীর, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, এডভোকেট মো. আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া, শহীদসন্তান শমী কায়সার, অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, এডভোকেট এম সাঈদ আহমেদ রাজা, শহীদসন্তান নূজহাত চৌধুরী শম্পা, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, লেখক ব্লগার মারুফ রসূল, অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব, ডাঃ মফিজুল ইসলাম মান্টু, সাংবাদিক হারুন আর রশিদ, সংস্কৃতিকর্মী কাজল ঘোষ, সংস্কৃতিকর্মী শামসুল আলম সেলিম, সমাজকর্মী আবু সাদাত মো সায়েম, সংস্কৃতিকর্মী আব্দুল লতিফ চঞ্চল, চারুশিল্পী ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী, চলচ্চিত্রনির্মাতা ইসমাত জাহান, ছাত্রনেতা পলাশ সরকার, সাংবাদিক মহেন্দ্রনাথ সেন, সংস্কৃতিকর্মী বাহাউদ্দিন গোলাপ, ছাত্রনেতা আশেক মাহমুদ সোহান, সংস্কৃতিকর্মী শাহীন উদ্দিন আহমেদ, সমাজকর্মী কেশব রঞ্জন সরকার, এডভোকেট দীপক ঘোষ, সমাজকর্মী এ, বি, এম মাকসুদুল আনাম, এডভোকেট মালেক শেখ, সমাজকর্মী কামরুজ্জামান অপু, ছাত্রনেতা হারুণ অর রশিদ, ছাত্রনেতা অপূর্ব চক্রবর্তী, লেখক আলী আকবর টাবি, চলচ্চিত্রনির্মাতা লুবনা শারমিন, সহকারী অধ্যাপক শরীফ নুরজাহান, চারুশিল্পী শেখ শাহনেওয়াজ আলী পরাগ, সাংবাদিক আবু সালেহ রনি, চলচ্চিত্রনির্মাতা সাইফ উদ্দিন রুবেল, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, ড. তপন পালিত, ব্লগার অমি রহমান পিয়াল, চলচ্চিত্রনির্মাতা পিন্টু সাহা,  সমাজকর্মী হাসান আব্দুল্লাহ বিপ্লব, রত্নদীপ দাস রাজু, সাংবাদিক সাইফ রায়হান, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, শহীদসন্তান সাংবাদিক জাহিদ রেজা নূর, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রানী শীল, ড. তানজীর মান্নান রূপন, অনলাইন এক্টিভিস্ট এ,এস,এম শরিফুল হাসান, চারুশিল্পী ইফতেখার খান বনি, সমাজকর্মী আলমগীর কবির, সমাজকর্মী মোঃ হেলালউদ্দিন, সমাজকর্মী সুমনা লতিফ, সংস্কৃতিকর্মী শামস রাশীদ জয়, ডা. সাদমান সৌমিক নিশম সরকার, আবৃত্তিশিল্পী আরেফিন অমল, অধ্যাপক যোগেন্দ্রনাথ সরেন, মানবাধিকারকর্মী ফয়সাল হাসান তানভীর, সমাজকর্মী প্রাণতোষ তালুকদার, সমাজকর্মী আবদুল হালিম বিপ্লব, সমাজকর্মী কাজী রেহান সোবহান, সমাজকর্মী মো. আবদুল্লাহ, সমাজকর্মী আনোয়ার ইসলাম রানী, এডভোকেট আবদুল মালেক, সাংবাদিক দীলিপ মজুমদার, সংস্কৃতিকর্মী রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, সংস্কৃতিকর্মী সুচরিতা দেব, অনলাইন এক্টিভিস্ট এইচএম রিয়াজ আবীর, লেখক সাব্বির রহমান খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী খলিলুর রহমান, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, লেখক চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, ডাঃ একরাম চৌধুরী, গবেষক তাপস দাস, সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী।

আরও পড়ুন

×