ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সরেজমিন: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

‘আর সহ্য করতে পারছি না, বাঁচাও’

‘আর সহ্য করতে পারছি না, বাঁচাও’

ফাইল ছবি

 বকুল আহমেদ ও তবিবুর রহমান

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৭

‘আর সহ্য করতে পারছি না। তোমরা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো। আমাকে বাঁচাও।’– গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর প্রসব বেদনায় এভাবেই আর্তনাদ করছিলেন তামান্না আক্তার। তাঁকে ঘিরে শাশুড়ি আছিয়া বেগমের মলিন মুখ। পাশে বসে থেকেও  কিছুই করতে পারছিলেন না। 
পুত্রবধূর অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি আছিয়া বেগম। শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বললেন, ‌‘এখন কী করব, বুঝতে পারছি না। শনিবার রাতে তামান্নার প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় নরসিংদীর চিকিৎসক ঢামেক হাসপাতালে নিতে বলেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে দুপুর ১২টায় ঢামেক হাসপাতালে আসি। দেখি কাউন্টারে টিকিট বন্ধ। পরে জানতে পারি, চিকিৎসা বন্ধ। চিকিৎসক ধর্মঘটের বিষয়টি জানতাম না। 

শুধু তামান্না নয়, গতকাল সকাল ৮টা থেকে চিকৎসকদের ‌‌‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির পর ঢামেক হাসপাতালে আসা রোগী ও তার স্বজন নানামুখী দুর্ভোগে পড়েন। দূরদূরান্ত থেকে  মুমূর্ষু রোগী এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে না পারায় হতাশ হয়ে অনেকেই ফিরে যান। আবার কেউ কেউ রোগী নিয়ে অপেক্ষা করেন হাসপাতালের সামনে। 
বিকেল পৌনে ৪টায় জরুরি বিভাগের সামনে রোগী তাসলিমা আক্তার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁকে ঘিরে স্বজনরাও আর্তনাদ করছিলেন। তাদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে। 
অসুস্থ মেয়ের কান্না দেখে বৃদ্ধ বাবা নুরুল ইসলামও কাঁদছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর সব পানিতে ডুবে গেছে।’ 

তাসলিমার ভাই মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমার বোনের কিছু হয়ে গেলে এর দায় কে নেবে? 
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে স্ত্রীর কাঁধে ভর করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন রোগী ইলিয়াস মিয়া। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া বন্ধ থাকার খবর পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী রাহিমা আক্তার। তিনি জানান, তাদের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদীতে। স্বামীর মাথার সমস্যা নিয়ে তিনি এখানে এসেছেন। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে আসেন। এখন কোথায় যাবেন, সে ভাবনায় চোখে অন্ধকার দেখছেন। রাহিমা বলেন,‌ ‘আমরা গরিব মানুষ। এ কারণে নরসিংদী থেকে ঢাকার সরকারি হাসপাতালে স্বামীর চিকিৎসা করাতে এসেছি।’ ইলিয়াস মিয়া মাথার যন্ত্রণায় ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। মাথায় হাত রেখে শুধু বলেন, ‘খুব যন্ত্রণা, আর সহ্য করতে পারছি না।’ 
 

আরও পড়ুন

×