ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ফের ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষ

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের আন্দোলন

ফের ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষ

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবস্থান

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ০২:১৪ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ০৩:১৬

ঢাকা মহানগরের অন্তত ১০টি স্থানে সড়ক অবরোধ করে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববারও বিক্ষোভ করেছেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। ফলে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। চরম দুর্ভোগের শিকার হন নগরবাসী। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধের সময় চালকদের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষও হয়েছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন।

সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা গণঅবস্থান পালন করে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন। এ সময় দুই পাশের সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ১টায় প্রেস ক্লাব থেকে পদযাত্রা করে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।

এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে সরকার আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান চায় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের রিকশা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করছি, সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে এ বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।

রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম সমকালকে বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনার সোমবার আমাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছেন। এ ছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার আশ্বাস দিয়েছেন। এসব কারণে আন্দোলন আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেছি। তবে আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারকে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের রুট পারমিট নীতিমালা, গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় ৪ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে রাস্তায় অটোরিকশা চালকদের চলতে বাধা দেওয়া যাবে না।’ চালকদের নিয়ম মেনে রিকশা চালানোরও আহ্বান জানান তিনি। 

এদিন রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রিকশাচালকদের গণঅবস্থান শুরু হয়। একটি ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে শুরু হয় সমাবেশ। কর্মসূচিতে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘রিকশাচালকদের দাবি না মানলে সরকারের গদি থাকবে না। আপনারা ছাত্রদের অভ্যুত্থান দেখেছেন, কিন্তু শ্রমিকদের গণঅভ্যুত্থান দেখেননি। বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখানোর চেষ্টা করবেন না। এটা করা হলে সারাদেশে আগুন জ্বলে উঠবে।’ শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মহল্লায় মহল্লায় কমিটি বানান; শ্রমিকদের সংগঠন গড়ে তোলেন। রিকশাচালক, গার্মেন্টস শ্রমিক ও ক্ষেতমজুরদের কাছে খবর পৌঁছে দিন। 

ইউনিয়নের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ কাফি রতন বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে রাজপথ থেকে সরব না। আমরা বলছি– দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করবেন না।

ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রধান সড়কে চালানোর অনুমতি আমরা চাচ্ছি না। তবে রাস্তা পারাপারের জন্য ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবহার করতে দিতে হবে।

এদিন সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়েও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নেয়। সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনরতদের সঙ্গে এক দল যুবকের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় চালকরা কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করলে বাসযাত্রীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। পুলিশের সঙ্গেও আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছেড়ে চলে যান। দোলাইরপাড়েও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।

সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ চার রাস্তার মোড়, বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন রিকশাচালকরা। এ সময় গাবতলী থেকে হাজারীবাগ ও বছিলা রোডে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও তারা কর্ণপাত করেননি। দুপুরে আন্দোলনকারীরা সড়ক থেকে চলে যান। এর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ছাড়া আগারগাঁও, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১ এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যা বললেন

আদালত থেকে নির্দেশনা আসার পর ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে চলমান সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা এ কথা বলেন। 
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, উচ্চ আদালত থেকে যে নির্দেশনা আসে, ওই নির্দেশনার মধ্যেই আমরা কাজ করব। ভালো নির্দেশনা আসবে বলে প্রত্যাশা করি। আন্দোলনকারীদের প্রতি সব সময় আহ্বান, তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করেন। তাদের যদি কোনো দাবি থাকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উন্মুক্ত আছে। ওখানে গিয়ে বিক্ষোভ করতে পারেন। এতে যানজট কমবে। 

আরও পড়ুন

×