ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড

পাঁচ ভবনে নতুন করে অর্ধডজন মন্ত্রণালয় ব্যাহত কাজ

পাঁচ ভবনে নতুন করে অর্ধডজন মন্ত্রণালয় ব্যাহত কাজ

ফাইল ছবি

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৫৯

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে ছয়টি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নতুন জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল রোববার অস্থায়ীভাবে বেশ কয়েকটির কাজ শুরু হয়েছে। আজ সোমবার শুরু হতে পারে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, দপ্তর প্রস্তুত না হওয়ায় তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বেগ পেতে হচ্ছে।

গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে অগ্নিকাণ্ডে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের প্রায় সবকিছু ভস্মীভূত হয়। এর পর গত শনিবার সরকার নতুন জায়গায় অস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, আংশিক প্রস্তুত অবস্থায় রোববার রেল ভবনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ক্রীড়া পরিষদ ভবনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, শ্রম ভবনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, রাজধানীর জিপিওর ডাক ভবনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনে আজ সোমবার থেকে শুরু হতে পারে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম। এখানে অফিস করবেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

গতকাল সরেজিমন নগর ভবনে দেখা যায়, ১৪ তলায় দুটি কক্ষকে একীভূত করে আসিফ মাহমুদের জন্য প্রস্তুত করছেন কর্মীরা। তাঁর সামনের কক্ষ তৈরি হচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের 
জন্য। পুরো মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক কাজে ভবনের ১৩, ১৪ ও ১৫ তলার একাংশ প্রস্তুত করা হচ্ছে। আসিফ মাহমুদ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ক্রীড়া পরিষদ ভবন।

রেল ভবনের কয়েকটি কক্ষে গতকাল কার্যক্রম শুরু হয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের। এখানে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল করিম গতকাল অফিস করেছেন। তবে স্থান সংকুলান না হওয়ায় নতুন কোথায় স্থানান্তর হবে, তা সিদ্ধান্ত হয়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আগে থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন। মাঝেমধ্যে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বসতেন। মন্ত্রণালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে নাহিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজধানীর বিজয় নগরের শ্রম ভবনে প্রস্তুত শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের জন্য।
সব ভবনের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্ধারিত কক্ষ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। নতুন আসবাব বসানোর পাশাপাশি রঙের কাজ চলছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় নগর ভবনের তিনটি তলায় ৭৫টি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। বেশির ভাগ কক্ষই কয়েক বছর ধরে অব্যবহৃত ছিল।

ডিএসসিসির সহকারী প্রকৌশলী আহসান হাবিব কর্মীদের কাজ তদারক করছেন। মূল দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বোরহান আহমেদ বলেন, ‘উপদেষ্টার বসার কক্ষ প্রায় প্রস্তুত। সোমবার থেকে তিনি অফিস করতে পারবেন। অন্যান্য কক্ষ দুয়েক দিনের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে। সাময়িক ব্যাঘাত ঘটলেও, পুরোদমে কাজ দ্রুত শুরু হবে আশা করছি।’

গুলিস্তান জিপিওর ডাক বিভাগের সাবেক সদরদপ্তর ভবনে অফিস করবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মুশফিকুর রহমান। তাঁর পাশের কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের জন্য। এ বিভাগের স্টাফদের জন্য ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ফাঁকা কক্ষ এবং কনফারেন্স রুম দেওয়া হয়েছে। গতকাল সেখানে অনেকে অফিস করেন।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদীসহ অন্য কর্মকর্তাদের অফিস আগেই ছিল। ফলে এখানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় স্থানান্তরে তেমন বেগ হয়নি। গতকাল অনেকে এখানে অফিসও করেন। ক্রীড়া সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদী সমকালকে বলেন, ‘রোববার এসিআর-সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ ও কিছু চিঠিপত্র আদান-প্রদান হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে শতভাগ নথি অনলাইনে রয়েছে। আশা করছি, কাজে সমস্যা হবে না।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গতকাল শ্রম ভবনে অফিস করেছেন। ভবনের চতুর্থ তলার সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের অন্তত ১৫ কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়। তাদের কেউ ভিডিও কলে স্বজনের সঙ্গে কথা বলছেন; কেউ কেউ করছেন খোশগল্প। আইসিটি সেলের এক কর্মকর্তা সচিবালয়ে তাদের পুড়ে যাওয়া কক্ষের তালিকা এবং সেখানে যারা বসতেন, তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর লিখছিলেন। এ সময় প্রশাসন শাখা-১-এর সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মাসুম তাঁকে নিজের নাম ও মোবাইল নম্বর দেন।

শ্রম ভবনের ২০ তলায় শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ফাহমিদা আখতারের কক্ষে পাওয়া যায় শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে। তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমাদের সবকিছু পুড়ে গেছে। বেশির ভাগ নথি অনলাইনে। স্টাফদের কিছু বিষয়সহ যেসব নথি শুধু কাগজে থাকে, তা পুড়ে যাওয়ায় কিছুটা অসুবিধা হবে।’

 

আরও পড়ুন

×