ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড

কোনও বিস্ফোরক বা ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পায়নি কমিটি

কোনও বিস্ফোরক বা ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পায়নি কমিটি

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:৫৯ | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৮:২০

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা বা রাসায়নিক ও বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পায়নি তদন্ত কমিটি। বৈদ্যুতিক তারের দুর্বল সংযোগ থেকেই আগুনের সূত্রপাত। বাতাসের প্রবাহ ও করিডোর ট্যানেলের মাধ্যমে পশ্চিম থেকে পূর্ব প্রান্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ছয়তলা থেকেই এ অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। 

গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ উপলক্ষে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা প্রেস ব্রিফিং করে এ তথ্য জানান।

শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। কমিটির সদস্যরাই সে ব্যাপারে অবহিত করবেন। 

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, তদন্ত কমিটিতে বিশেষজ্ঞ দল এবং তদন্তকাজে সেনাবাহিনীর বম্ব স্কোয়াড ছিল। ডগ স্কোয়াড ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। সবাই মিলে একমত হওয়া গেছে– দুর্বল সংযোগ থেকেই আগুনের উৎপত্তি। এর বাইরে কিছু পাওয়া যায়নি।

তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বলেন, ওই দিন রাত ১টা ৩২ মিনিট থেকে ৩৯ মিনিটের মধ্যে আগুনের সূত্রপাত। একটা টানেলের মতো ফ্যাক্টরের কারণে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আগুন ছড়িয়েছে। পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বাতাসের প্রবাহের কারণে এমনটা হয়েছে। পরে আগুন ওপরের দিকে উঠে গেছে।

কমিটির অন্যতম সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাসেল বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হওয়ার মতো তিনটি স্থানের নমুনা সংগ্রহ করে সেনাবাহিনীর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে বিস্ফোরকজাতীয় পদার্থ বা রাসায়নিকের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। 

এমনকি ডগ স্কোয়াড দিয়েও নিশ্চিত করা গেছে বিস্ফোরকের আলামত পাওয়া যায়নি।

তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, রাত ১টা ৫২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রথম পৌঁছে। সচিবালয়ে উঁচু মইবিশিষ্ট গাড়ি প্রবেশে সীমাবদ্ধতা ছিল। এতে কিছু সময়ক্ষেপণ হয়। তলাগুলোতে বৈদ্যুতিক তার ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কারণে দাহ্য পদার্থের ছড়াছড়ি ছিল। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ছয়তলার আগুন না নিভিয়ে সাততলায় যাওয়ার অবস্থা ছিল না। প্রতিটি তলায় কলাপসিবল গেট ছিল। সেগুলো কেটে কেটে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ঢুকতে হয়েছে।

অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী জানান, ভবনটির যেটুকু ক্ষতি হয়েছে, সেটা মেরামতযোগ্য। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো অগ্নিকাণ্ড না ঘটে, সে জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডসহ অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ থাকবে।

নথিপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, নথি ক্ষতিগ্রস্ততে খুব একটা সমস্যা হবে না। গুরুত্বপূর্ণ নথি তেমন নষ্টও হয়নি। যেটুকু হয়েছে, ই-নথি হওয়ার কারণে উদ্ধারযোগ্য। ইতোমধ্যে কিছু নমুনা বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আরও কিছু নমুনা সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হবে। এতে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়াটাও এড়ানো যাবে। 
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, অগ্নিকাণ্ডের দুটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি কুকুরের অস্তিত্ব রয়েছে। সেই ভিডিও উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এতে বিষয়টি সবার জন্য বোঝা সহজ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন

×