ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা

ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ১২:২৮ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ১২:৫২
ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে প্রতিষ্ঠানটির শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বেলা ১২টার দিকে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের একটি ঢাকা কলেজ।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা, পুলিশের একপেশে আচরণের প্রতিবাদে গতকাল রাত ৩টার দিকে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য নিজ নিজ কলেজের সামনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।
আজ বেলা ১২টার দিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সড়ক অবরোধ করেননি। তবে এই সময়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হন।
ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হওয়া সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শহীদ মিনারের সামনে আজ দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন।
রোববার রাত ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। নীলক্ষেত মোড়-সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনের এ ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকা। মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপে মধ্যরাতে কেঁপে ওঠে আশপাশ। সারা রাত উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। থেমে থেমে চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে গতকাল বিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটাপদ্ধতি বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবির অগ্রগতি জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে যান সাত কলেজের এক দল শিক্ষার্থী। এ সময় কয়েকজন হুড়মুড় করে তার কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। এতে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন অধ্যাপক মামুন।
অধ্যাপক মামুনের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদে তারা সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা কলেজের সামনে জড়ো হন। পরে অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে অধ্যাপক মামুনকে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে তারা সায়েন্স ল্যাব, টেকনিক্যাল মোড় ও তাঁতীবাজার সড়ক অবরোধ করেন।
পরে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিতে হবে এবং উপ-উপাচার্যকে তার আচরণের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে- এমন দাবি নিয়ে রাত ১০টার পর সায়েন্স ল্যাব ছেড়ে মিছিল নিয়ে অধ্যাপক মামুনের বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে এগোতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ১০টার দিকে তারা নীলক্ষেত মোড়-সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে পৌঁছান। এক পর্যায়ে তারা উপ-উপাচার্যের বাসভবন অভিমুখে রওনা হওয়ার ঘোষণা দেন।
খবর পেয়ে স্যার এএফ রহমান হলের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে পুলিশ তোরণের এক দিকের সড়কে ব্যারিকেড দেয়। বেশ কিছু সময় ধরে দু’পক্ষের ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান চলে।
কিছুক্ষণ পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুনরায় এগিয়ে আসেন। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পিছু হটে। এর পর তারা দৌড়ে তোরণ পর্যন্ত ঢাবি শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। আবার ঢাবি শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে নিয়ে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। এর মধ্যে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। রাতভর চলে উত্তেজনা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবি হলো– ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে; সাত কলেজের শ্রেণিকক্ষের ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না; শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে; সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক যুক্ত করতে হবে; সাত কলেজের ভর্তি ফির স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাবি ব্যতীত নতুন একটি অ্যাকাউন্টে ভর্তি ফির টাকা জমা রাখতে হবে।
এদিকে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। রাতে ঢাবির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোমবারের সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আজ ৭ কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। আশা করি, সব পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।