ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি
রাস্তা খোঁড়ার অনুমতি নেই চালু হচ্ছে না ৯ উপকেন্দ্র
রাজধানীতে ব্যাহত বিদ্যুৎ সেবা

ফাইল ছবি
হাসনাইন ইমতিয়াজ
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫ | ০১:১৫ | আপডেট: ২৪ মে ২০২৫ | ১২:০৩
বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছ থেকে রাস্তা খননের অনুমতি না পাওয়ায় ৯টি উপকেন্দ্র চালু করতে পারছে না ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি)। এতে রাজধানীতেই নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সময়মতো শেষ হচ্ছে না প্রকল্পও।
ডিপিডিসি সূত্র জানায়, রাজধানীর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ২০১৭ সালে ২০ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। আলোচিত এ প্রকল্পের আওতায় নতুন ৪৩টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র (১৩২/৩৩/১১ কিলোভোল্ট-কেভি) নির্মাণ, বিদ্যমান উপকেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। এ ছাড়া ডিপিডিসির প্রধান কার্যালয় (টুইন টাওয়ার), বিতরণ ব্যবস্থার অটোমেশনের জন্য একটি স্ক্যাডা (সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা অ্যাকুইজিশন) সেন্টার, আধুনিক ওয়্যারহাউস, অপটিক্যাল ফাইবারসহ ভূগর্ভস্থ কেবল নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০টি উপকেন্দ্র চালু করা হয়েছে এবং চালুর অপেক্ষায় আছে আরও ১৫টি। কিন্তু রাস্তা খোঁড়ার অনুমতি না পাওয়ায় ৯টি উপকেন্দ্রের বিদ্যুৎ সরবরাহ কেবল স্থাপন করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, কেবল বিছানোর জন্য ২০২১ সাল থেকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ৮টি সংস্থার আওতাধীন ঢাকা শহর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সড়ক খননের জন্য আবেদন করা হয়। এর পর সংস্থাগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হয়। এর মধ্যে যেসব উপকেন্দ্রের জন্য অনুমতি মিলেছে, সেগুলোর কেবল স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ৯টি উপকেন্দ্রের বিষয়ে রাস্তা খননের অনুমতি মিলছে না। ক্ষেত্রবিশেষে অনুমতি পাওয়া গেলেও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপন কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে অনেক উপকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও তা নির্ধারিত সময়ে চালু করা যাচ্ছে না। কয়েকটি প্রকল্পের বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিপিডিসির পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি যথাক্রমে ৬১ ও ৫৬ শতাংশ। তবে যথাসময়ে রাস্তা খননের অনুমতি না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৩ শতাংশ ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে।
ডিপিডিসি সূত্র জানায়, রাস্তা খননের সবচেয়ে বেশি আবেদন আটকে আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩৬টি। এর মধ্যে ১৩২ কেভির ১১টি, ৩৩ কেভির ৭টি এবং ১১ কেভির সংস্থা ১৮চি। এর পরই আছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ১৭টি– ১৩২ কেভির ৬টি এবং ৩৩ কেভির ১১টি। এ ছাড়া এলজিইডিতে ১৩২ কেভির দুটি ও ৩৩ কেভির চারটি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৩২ কেভির একটি আর ৩৩কেভির দুটি, পানি উন্নয়ন বোর্ডে ৩৩ কেভির একটি এবং সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে ৩৩ কেভির একটি।
ডিপিডিসির চিঠিতে আরও বলা হয়, এই প্রকল্প শুরু হওয়ার পরবর্তী দুই বছরে কভিড-১৯ এর প্রভাব, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, রাস্তা খননের অনুমতি প্রাপ্তিতে বিলম্ব ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপনের জন্য রাস্তা খননের অনুমতি না পাওয়ায় অপেক্ষমাণ উপকেন্দ্রগুলো যথাসময়ে চালু করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। শিগগির সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে একটা সমাধান বের করা হবে।
আলোচিত প্রকল্প
২০ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পে ঠিকাদার চীনের তেবিয়ান ইলেকট্রিক অ্যাপারেটার্স (টিবিইএ)। বাংলাদেশে তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান, যার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের। সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি পাওয়ারকো আসলে একটি শেল কোম্পানি। এটি নিজের মামার নামে খুলেছিলেন নসরুল হামিদ।
জানা গেছে, প্রকল্পটিতে শুধু যন্ত্রপাতি কিনতেই ৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচের অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য টিবিইএ চেয়েছিল ২১০ কোটি ২৫ লাখ ডলার। প্রকল্প পরামর্শক বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন জানিয়েছিল, এই ব্যয় সর্বোচ্চ ৮৭ কোটি ৬ লাখ ডলার হতে পারে। কিন্তু পরামর্শ না শুনে ডিপিডিসি টিবিইএর সঙ্গে ১৩২ কোটি ২২ লাখ ডলারের চুক্তি করে। যাতে বাড়তি খরচ হয় ৪৫ কোটি ১৬ লাখ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যা ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, পাওয়ারকোর চাপেই বেশি দামে চীনা ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়েছে।
- বিষয় :
- রাস্তা খোঁড়া