ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ‘ঘোষণা’ পান্থকুঞ্জ পার্ক

জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ‘ঘোষণা’ পান্থকুঞ্জ পার্ক

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্কের সার্ক ফোয়ারা গেটে শুক্রবার জনগণ বনাম অন্তর্বর্তী সরকারবিষয়ক গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫ | ০০:৪২ | আপডেট: ৩১ মে ২০২৫ | ১০:২৬

আইন অমান্য করে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পান্থকুঞ্জ পার্ক ঘিরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করায় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে জনগণ। ‘পান্থকুঞ্জ মোকদ্দমা: জনগণ বনাম অন্তর্বর্তী সরকার’ শিরোনামের এই প্রতীকী মামলার গণশুনানি হয় গতকাল শুক্রবার। পান্থকুঞ্জ পার্কের সার্ক ফোয়ারা গেটে এ আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’। দুই ঘণ্টার শুনানিতে ‘কৌঁসুলি ও সাক্ষীদের’ বক্তব্য গ্রহণ এবং সর্বশেষে ‘রায়’ ঘোষণা করেন বিচারকরা।

রায়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পান্থকুঞ্জ পার্ক জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং বাদীপক্ষের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিবাদী পক্ষসহ অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পান্থকুঞ্জ পার্কে জনগণের অবাধ প্রবেশ ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ‘নির্দেশ’ দেওয়া হয়। রায় বাস্তবায়ন এবং বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সংযোগ সড়কের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

গণশুনানিতে বিশিষ্ট নাগরিক, পরিবেশ আন্দোলনকারী, গবেষক ও সংস্কৃতিকর্মীরা বিচারক ও সাক্ষী হিসেবে অংশ নেন। বিকেলে দুই ঘণ্টাব্যাপী প্রতীকী আদালতে শোনানো হয় প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট অভিযোগ, পরিবেশ ও আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ এবং জনস্বার্থে করা নানা যুক্তি। গণশুনানিতে ‘বিচারক’ ছিলেন ড. গীতিআরা নাসরীন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সামসি আরা জামান ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শুনানির সূচি থাকলেও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কোনো সরকারি প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হননি। আয়োজকরা মাইকে তা জানান দেন। পরে বিকেল ৪টায় শুনানি শুরু হলে অভিযোগপত্র পাঠ করেন গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব ও নাঈম উল হাসান। তারা জানান, এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক প্রকল্প আইন, সংবিধান, পরিবেশ ছাড়পত্র ও জনস্বার্থ– সবকিছুরই সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রকল্পে রয়েছে পিপিপি নীতিমালার অবমাননা, অর্থনৈতিক কারসাজি, দুর্নীতি ও বৈষম্যমূলক চুক্তি। এ ছাড়া পান্থকুঞ্জে গাছ কাটার কারণে পাখি, বাদুড় ও পতঙ্গদের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে বলে জানান তারা।

গণশুনানিতে সাক্ষ্য দেন নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান, পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ, তেঁতুলতলা আন্দোলনের সৈয়দা রত্না, পান্থকুঞ্জ প্রভাতী সংঘের সিরাজুদ্দিন তুহিন এবং শিল্পী সৈয়দ মুহাম্মদ জাকির। আদিল বলেন, ‘এই প্রকল্প উন্নয়ন নয়, বরং জনগণ ও প্রকৃতির বিপরীতে একটি ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি। সরকার ঠিকাদারদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর, নাগরিক স্বার্থ উপেক্ষিত।’ পাভেল বলেন, ‘এই পার্কে প্রায় দুই হাজার গাছ কাটা হয়েছে, যার মানে এক হাজার মানুষের অক্সিজেন সরবরাহ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। গাছ কাটা ও নির্মাণকাজের ফলে অসংখ্য পাখি ও জীবের আবাসন ধ্বংস হয়েছে। প্রকৃতিতে এর বিরূপ প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে।’

শুনানি শেষে প্রতীকী আদালতের বিচারকমণ্ডলী রায় দেন। গণশুনানিতে অংশ নেওয়া কবি সাঈদ জুবেরী বলেন, ‘আমরা ছয় মাস ধরে আন্দোলন করছি শান্তিপূর্ণভাবে, সড়ক বন্ধ না করে। কিন্তু সরকার কোনো গুরুত্ব দেয়নি। তাহলে কি সড়ক অবরোধ করলেই কানে পৌঁছায়? কোনো সরকারই পরিবেশ ও প্রকৃতির বিষয়ে সচেতন নয়। এমনকি এই সরকারের মধ্যেও যারা সচেতন, তারাও প্রকৃতিবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত হয়ে যাচ্ছেন। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। এই গণশুনানি প্রমাণ করে, জনমতের গুরুত্ব সরকার যতটা দেখাতে চায়, বাস্তবে ততটা গুরুত্ব দেয় না।’

আরও পড়ুন

×