নাগরিক সমাবেশ
কর্মজীবী নারীর স্বীকৃতি চান তথ্য আপারা
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ১৭তম দিনে নাগরিক সমাবেশে নারীরা। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫ | ২২:২০
দুই দাবিতে আন্দোলনরত তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা বলেছেন, আওয়ামী দোসর নয়, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবী নারীর স্বীকৃতি চাই। গত সাত বছর নিজেদের মেধা, যোগ্যতা ও শ্রমের মাধ্যমে দেশের জন্য কাজ করেছি। কোনো দলের পক্ষে কাজ করিনি। তাই আমাদের বাদ দেওয়া চলবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ১৭তম দিনে নাগরিক সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা। এতে নারী অধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সমাবেশের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেওয়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত তথ্য আপা প্রকল্পে (দ্বিতীয় পর্যায়ের) কর্মরতদের সমগ্রেডে পদসৃজন করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর এবং কেটে নেওয়া বেতন-ভাতা অবিলম্বে পরিশোধের দাবিতে ২৮ মে থেকে আন্দোলন করছেন তারা। ঈদুল আজহার দিনেও তারা সেখানে ছিলেন।
গতকাল গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মার্জিয়া প্রভা ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সুস্মিতা রায় সুপ্তির যৌথ সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ডা. হারুনুর রশিদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য জাকিয়া শিশির, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা প্রমুখ। তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীদের পক্ষে বক্তব্য দেন ঝালকাঠি সদরের তথ্য আপা কর্মকর্তা সংগীতা সরকার ও কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার তথ্য কর্মকর্তা শান্তা ইসলাম।
সমাবেশের শুরুতে সংগীতা সরকার বলেন, এতদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিলেও সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। চার দিন না খেয়ে ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে হামলার শিকার হয়েছি। অন্তঃসত্ত্বাদেরও রেহাই দেয়নি। ১ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি রেখে কোনো কথা না বলেই আমাদের বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তিন ধাপে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ পেয়েছি। সরকারি চাকরির বয়স অতিক্রম হয়ে যেতে পারে। রাজস্বভুক্তর কথা বলে বেতন কাটা হয়েছে। বিভিন্ন ভাতা কাটা হয়েছে। প্রত্যেক অর্থবছরে তিন মাসের যাতায়াত ভাতা ও সন্তানদের শিক্ষা ভাতা কাটা হয়েছে। এগুলো কোথায় যায়– তার কোনো হিসাব নেই। আমাদের ‘আওয়ামী দোসর’ ট্যাগ দেওয়া অন্যায়। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবী নারীর স্বীকৃতি চাই।
বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা তথ্য কর্মচারী শান্তা ইসলাম। তিনি বলেন, আর কত দিন রাস্তায় বসে থাকতে হবে! যাদের নির্দেশনায় কাজ করেছি, তারা একবারও আমাদের দেখতে আসেননি। আমাদের সম্মান কেড়ে নেওয়ার কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেবো না। আমরা রাষ্ট্রের কর্মী হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই।
তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা বলেন, আমরা রাষ্ট্রের সব নিয়ম মেনে একাডেমিক যোগ্যতার মাধ্যমে এ প্রকল্পে নিয়োগ পেয়েছি। তখন বলা হয়েছিল, আমাদের নিয়ে রাষ্ট্র যে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সে আশায় এত বছর ধৈর্য নিয়ে কাজ করে আসছি। আমাদের বাদ দেওয়া যাবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
সমাপনী বক্তব্যে সীমা দত্ত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর জুলাইয়ের আন্দোলনকারীদের ঢাকায় এনে সম্মান দেওয়া হলেও এই নারীদের সাইবার বুলিং করা হচ্ছে। তারা আসলে দোসর কিনা তা প্রমাণ করতে হবে, যা আওয়ামী লীগের আমলেও এভাবে ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। এর পরিণাম ভালো হবে না। ৩০ জুনের আগেই তাদের ডেকে আলোচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
৪৯২টি উপজেলায় তথ্যকেন্দ্রে একজন করে তথ্যসেবা কর্মকর্তা (দশম গ্রেড), দু’জন তথ্যসেবা সহকারী (১৬তম গ্রেড) ও একজন করে অফিস সহায়ক (২০তম গ্রেড) মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৯৬৮ জন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন। তৃণমূল নারীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, আইন, জেন্ডার, ব্যবসা, পরিবার পরিকল্পনা এবং সাইবার সিকিউরিটি– এই আট বিষয়ে জরুরি তথ্য সরবরাহ ও সহায়তা দিয়ে আসছেন তথ্য আপা প্রকল্পের দেড় হাজার কর্মী। আন্দোলনকারীরা জানান, তাদের চাকরি স্থায়ী করার কথা বলে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে প্রতি মাসে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪০০ ও সহকারীদের বেতন থেকে ১ হাজার ৩৯০ টাকা কেটে নেয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তারা সেগুলো ফেরত চান।
- বিষয় :
- নারী গণসমাবেশ
- নারী
- স্বীকৃতি