ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

চুক্তির ২২ বছর

শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে দায়িত্ব নেবার আহ্বান

শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে দায়িত্ব নেবার আহ্বান

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন অতিথিরা- সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৮:৪৯ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৮:৫৪

দীর্ঘ ২৩ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। মৌলিক ধারাগুলোর বাস্তবায়ন এখনও বাকি রয়ে গেছে। পাহাড়ে হানাহানি ও সংঘাত বন্ধে শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের কাজ সরকারের। সরকারকে এই দায়িত্ব নিতে হবে।

বুধবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে এসেছে। দাবি উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনকে দ্রুত কার্যকর করার। শান্তি চুক্তির ২৩ বছর উপলক্ষে ধানমন্ডির ডিব্লিউভিএ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।

সংগঠনের সদস্য মেইনথিন প্রমীলার সঞ্চালনায় ও সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন এবং সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারাহ তানজীম তিতিল।

রাশেদ খান মেনন বলেন, পার্বত্য চুক্তির বর্ষপূর্তি একটি আনন্দের দিন ছিল, এখন আনন্দ করার বাস্তবতা আছে কি না আমি জানি না। সামরিক সমাধানের মাধ্যমে নয় রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে।

বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, উন্নয়নের নামে বৈষম্য চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। চুক্তি করে চুক্তি না মানা খুব দুঃখজনক।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জুম্মদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন, নির্যাতন, অত্যাচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও নতুন করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

সাংবাদিক সোহরাব হোসেন বলেন, যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চুক্তি করতে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা হয়েছিল তেমনি বাস্তবায়ন করতেও বাধ্য করতে হবে। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি কর্তৃত্ববাদের একটি প্রতিযোগীতা। রাষ্ট্রের উচিত এগুলো বন্ধ করা। সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা হওয়া জরুরি।

অধ্যাপক মেসবাহ কামাল অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, বহুজাতির দেশ বাংলাদেশ। এটাকে অস্বীকার করা হচ্ছে। সবাইকে সাংবিধানিকভাবে বাঙালী করা হয়েছে। অন্য জাতিগোষ্ঠীরা উপেক্ষিত হচ্ছে।

সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা বলেন, আমলারাই এখন দেশ চালাচ্ছে। এ বাস্তবতায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ছে।

কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারাহ তানজীম তিতিল বলেন, এ অভিযোগটা সত্যি যে, পাহাড় থেকে সরানো হয়নি সেনাক্যাম্পগুলো। পাহাড় কেটে কেন পর্যটন হবে? আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে কেন পর্যটন করা হবে? এ বিষয়গুলোর সুরাহা হতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে সঞ্জীব দ্রং বলেন, সরকার বলছে চুক্তির অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু পাহাড়িরা বলছে, চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়নি। আমার মনে হয়, এখানে একটা দূরত্ব রয়েছে। এ দূরত্ব দূর করতে নতুন করে সংলাপের প্রয়োজন।

স্বাগত বক্তব্যে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। আঞ্চলিক পরিষদকে অকার্যকর অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক মূল বিষয় যেমন ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় পুলিশ, পর্যটন ইত্যাদি জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
দিবসটি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বুধবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শোভাযাত্রা, মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি উদযাপিত হয়েছে।

রাঙামাটিতে জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জনসংহতি সিমিতর কেন্দ্রীয়ং সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি উষাতন তালুকদার। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কল্পরঞ্জন মাঠে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক)-এর উদ্যোগে সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। বরিশালে শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি পালন করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। একই দিন বরিশালের গৌরনদীতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আনন্দর্যা লি ও সমাবেশ হয়েছে।


আরও পড়ুন

×