ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে চার সংগঠন

'কারখানা বন্ধ হলে বাজার হারাবে পোশাক খাত'

'কারখানা বন্ধ হলে বাজার হারাবে পোশাক খাত'

সোনারগাঁও হোটেলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠনের সংবাদ সম্মেলনে অতিথিরা- সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১ | ১০:২১

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার লকডাউন কার্যকর করলে ওই সময়ে তৈরি পোশাক, বস্ত্র ও এর পশ্চাৎসংযোগ শিল্পের কারখানা খোলা রাখার সুযোগ চেয়েছে এসব খাতের উদ্যোক্তাদের চার সংগঠন। উদ্যোক্তারা বলেছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনা করছেন। লকডাউনের মধ্যে তা আরও জোরদার করবেন। পাশাপাশি সরকারের সব শর্ত তারা মেনে চলবেন। কিন্তু কারখানা খোলা রাখার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে রপ্তানির বাজার হারাতে হবে। এ ছাড়া কারখানা বন্ধের ফলে শ্রমিকরা গ্রামে গেলে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ, বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিটিএমইএ এবং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ ছাড়া টেরিটাওয়েল এবং অ্যাপেসরিজ প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির নেতারাও এই দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম, সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন পরবর্তী সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বিটিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, ইএবি সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ। হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ, বিজিএমইএর সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি, আরশাদ জামাল দিপু, এম এ রহিম (ফিরোজ), ফয়সাল সামাদ, বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মো. হাতেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে দেশজুড়ে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। চলমান পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে এটি সুচিন্তিত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে লকডাউনের সর্বজনীন প্রয়োজন সংক্রমণ প্রতিরোধ ও অর্থনীতির স্বার্থে কতটা যৌক্তিক, তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। বিশেষত শ্রমঘন তৈরি পোশাক খাতকে লকডাউনের বাইরে রাখা যুক্তিযুক্ত হবে। তিনি বলেন, গত বছর সাধারণ ছুটি এবং পরে দুই ঈদে শ্রমিকরা যেভাবে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিল, এবারের লকডাউনেও সে পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রয়েছে। লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা গ্রামে যাবে, আবার ফিরে আসবে। এতে দেশব্যাপী সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।

সেলিম ওসমান বলেন, অনেকে মনে করেন কারখানা চালু থাকলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে- এ ধারণা ভুল। কারণ কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালিত হচ্ছে। অন্যদিকে কারখানা বন্ধ থাকলে লাখ লাখ শ্রমিক বিচ্ছিন্নভাবে অলস সময় কাটাবে এবং পরিবারগুলো সমস্যায় পড়বে। ব্যবসায়ীরা সরকারের বিপক্ষে নয়।

ফারুক হাসান বলেন, করোনার কারণে রপ্তানি কমে গেছে। এই ক্রান্তিকালে সহযোগিতা দরকার। রোজা ও ঈদ আসন্ন। এ সময়ে কর্মীদের বেতন-বোনাস গুরুত্বপূর্ণ। কারখানা খোলা রাখা না হলে তা দেওয়া সম্ভব হবে না।

মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, দেশের বস্ত্র কারখানাগুলো বর্তমানে ২০০ কোটি ডলারের অর্ডারের সুতা ও কাপড় উৎপাদন করছে। আরও ২০০ কোটি ডলারের অর্ডার প্রক্রিয়াধীন। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে চলমান ও ভবিষ্যৎ অর্ডার দুটোই ক্ষতির মুখে পড়বে।

সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, করোনা মোকাবিলায় উন্নত দেশ নাকাল হচ্ছে। একটি অস্থির ও অনিশ্চিত সময় যাচ্ছে। সবাই এখন টিকে থাকার সংগ্রামে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এ রকম পরিস্থিতিতে উৎপাদন বন্ধ হলে বাজার হারাতে হবে। পোশাক ও বস্ত্র কারখানা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে উৎপাদন বন্ধ করা মানেই পুরো অর্থনীতিতে বিপদ ডেকে আনা।

আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, অনেক দেশের নামকরা ব্র্যান্ড নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করছে। এমন সময় দেশে কারখানা বন্ধ থাকলে তারা সুযোগ নিয়ে পাওনা পরিশোধ করবে না অথবা পণ্য নেবে না। আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, পোশাক ও বস্ত্র খাতের একেকজন উদ্যোক্তা অবশ্যই দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মীদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়েই কারখানা খোলা রাখার সুযোগ চান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত পোশাক খাতের পাঁচ হাজার শ্রমিকের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা গেছে। পোশাক কারখানার মালিক ও কর্মকর্তা পর্যায়ের দু-একজনের মৃত্যু হলেও শ্রমিক পর্যায়ে মৃত্যুর খবর তাদের জানা নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের পোশাকশিল্পের কর্মীদের মধ্যে দশ হাজারে তিনজন করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। এ থেকে বলা যেতে পারে, পোশাক ও বস্ত্র খাতের কর্মীরা কাজে থাকায় কারখানাগুলো যেমন উৎপাদনে রয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২০ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ পোশাক খাতের এক হাজার ১৫০টি কারখানার ৩১৮ কোটি ডলারের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত হয়। এসব বাতিল ও স্থগিত অর্ডারের ৯০ শতাংশ পরে প্রত্যাহার হলেও ক্রেতারা দাম কম দিয়েছে এবং বাকিতে মূল্য পরিশোধ করছে। অনেক পণ্য এখনও কারখানায় পড়ে আছে। কিছু কিছু ক্রেতা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। কোনো কারণে কারখানা বন্ধ বা সরবরাহ ব্যাহত হলেই তারা অর্ডার বাতিল করবে। অন্যদিকে, সম্প্রতি ক্রেতা দেশগুলোর বাজার উন্মুক্ত হচ্ছে। শীতকালীন অর্ডার আসছে। এ অবস্থায় দেশে লকডাউনের কারণে কারখানা বন্ধ হলে বাজার হাতছাড়া হবে। কারণ প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ অন্য দেশগুলোতে কারখানা খোলা।

খোলা রাখার আশ্বাস: এদিকে, সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলে পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় মিলিত হন। ওই সভায় লকডাউনে কারখানা বন্ধ রাখা হলে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। তার পরিপ্রেক্ষিতে লকডাউনে পোশাক ও বস্ত্র কারখানা খোলা রাখার বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে সমকালকে জানিয়েছেন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মো. হাতেম।

আরও পড়ুন

×