'প্রস্তাবিত অভিন্ন পারিবারিক আইন' প্রণয়ন জরুরি

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১০:৩৫ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১০:৩৫
সংবিধানে বর্ণিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আলোকে সকল নাগরিকের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে হলে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, অভিন্ন পারিবারিক আইনের মধ্যে অভিন্ন বিবাহ ও বিবাহ-বিচ্ছেদ রেজিস্ট্রেশন, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব ও প্রতিপালন, দত্তক ও পোষ্যসন্তান গ্রহণ এবং উত্তরাধিকার আইন অন্তর্ভূক্ত। অভিন্ন পারিবারিক আইন না থাকায় সকলক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, চারটি প্রধান ধর্মাবলম্বীর পারিবারিক আইনে পার্থক্য থাকার কারণে সমাজে অবিচার রোধ করা যাচ্ছে না এবং সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কাজেই সম্পদ-সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা বর্তমান সময়ের দাবি।
সকল নাগরিকের সমানাধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বুধবার অনলাইনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, সংবিধান প্রণেতা ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক, অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, বাসুদেব ধর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, অধ্যাপক জগন্নাথ বড়ূয়া, হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক পুলক ঘটক, সহযোগী অধ্যাপক খ্রীস্টিন রিচার্ডসন প্রমুখ।
এম. আমীর-উল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ ছিল, যে লক্ষ্য ছিল সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা সফল হয়নি। সকল নাগরিক যদি সমান হয় এবং আইনের আশ্রয় লাভের সমান অধিকারী হয়, তাহলে সংবিধান অনুযায়ী নারীর প্রতি বৈষম্য দূর হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
সুলতানা কামাল বলেন, প্রচলিত পারিবারিক আইনগুলো ধর্মীয় আইন ও প্রথার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে এটা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারীদের মধ্যে এবং একই সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। তিনি সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলেন, 'আমরা কিছু অসাংবিধানিক আইন নিয়েই গত ৫০ বছর ধরে চলেছি।'
মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশ অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। এটি সব নাগরিকের রাষ্ট্র। এসডিজির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নারীর অধিকারের পক্ষে আন্দোলন চলছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানা বাধা আছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে মহামিলন হিসেবে কাজ করবে অভিন্ন পারিবারিক আইন।
অজয় দাশগুপ্ত বলেন, এটা দুই বা এক বছরের ইস্যু তা বলা যাবে না। আমাদের সকলকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
সারা হোসেন বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন বলতে আমরা শুধু মুসলিম বা হিন্দু না, সবার কথা বলছি। এটা বাস্তবায়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সার্বজনীন মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, ধর্মীয় রীতিনীতি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-সবকিছুর সঙ্গেই আজকের আলোচনা খুবই প্রাসঙ্গিক। যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে আইন সংস্কার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত ও প্রতিহত করার চেষ্টা করছে, তারা কতটুকু ধর্মীয় চেতনার দ্বারা আর কতটুকু কায়েমী স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত তা পরিস্কার করে বোঝার প্রতি জোর দেন। এদিকে, বাংলাদেশে কোনো বৈষম্যমূলক আইন থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
সভাপতির বক্তব্যে ডা.ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে রেহাই না পাওয়ার অন্যতম কারণ সামাজিক ক্ষমতা কাঠামোয় নারীর দূর্বল অবস্থান। নারীর ব্যক্তি অধিকার ধর্মীয় আচার-আচরণ দ্বারা নির্ধারিত। ধর্মের ভিত্তিতে নারী অধিকার নির্ধারিত হলে নারীসমাজ বিভিন্নভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কাজেই সাংবিধানিক ধারার সাথে সংগতি রেখে তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকারসহ সকল নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ণ জরুরি।
সংগঠনের লিগ্যাল এ্যডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকছুদা আখতার লাইলীর
সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
- বিষয় :
- মানবিক মর্যাদা
- পারিবারিক আইন