ঘুষ না পেয়ে দোকানিকে মাদকের মামলা দিয়েছে পুলিশ, অভিযোগ পরিবারের

সংবাদ সম্মেলনের একটি চিত্র
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১০:৪৮ | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১০:৪৮
বাসা থেকে আটকের পর দাবি অনুযায়ী তিন লাখ টাকা না দেওয়ায় ফুটপাতের এক দোকানিকে মাদকের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর পল্লবী থানার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার হাবিব শেখ (২৭) মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনে ফুটপাতে পুরোনো মোবাইল ফোন বিক্রি করতেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি পল্লবী থানার উপপরিদর্শক কাজী রায়হানুর রহমান ও এএসআই মাহবুবুর রহমান ফোর্স নিয়ে তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান বলে তার পরিবার জানিয়েছে। এরপর তাকে ছেড়ে দিতে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়।
সোমবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে হাবিব শেখের স্বজনরা এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবের স্ত্রী সাথী আক্তার জানান, তার স্বামী পুরোনো ও ভাঙা মোবাইল সেট কিনে তা মেরামতের পর ফুটপাতে বিক্রি করেন। ৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় থেকে তিনি মোবাইল মেরামত করছিলেন। ওই সময় এসআই রায়হান ও এএসআই মাহবুবসহ পুলিশের কয়েক সদস্য তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যান। তারা আতঙ্কিত হয়ে কারণ জানতে চাইলে সোর্স মিজানুর ও দারোগা রায়হান পরে যোগাযোগ করতে বলেন।
ওই রাতে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে পুলিশের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে স্বামীকে ছেড়ে দিতে তারা তিন লাখ টাকা দাবি করেন। না হলে হেরোইনের মামলায় কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। তারা গরিব ও এত টাকা কেথায় পাবেন- এমন কথাও বলেন। একপর্যায়ে সবার সামনেই থানার চতুর্থ তলায় দারোগা রায়হানকে দেখতে পান। সেখানে তার স্বামীকে নির্মমভাবে পেটাতে দেখেন। পরে জানতে পারেন, তার স্বামী নাকি হেরোইনের ব্যবসা করেন, তার কাছ থেকে ৪৫ গ্রাম হেরোইন পেয়েছে পুলিশ! কিন্তু সে তো কখনও এই ব্যবসা দূরের কথা, তা খায়ও না। তিনি তো হেরোইন বিক্রি করলে মামলা থাকত, পুলিশ ধরত। কিন্তু এর আগে তো এমনটা হয়নি।
তার স্বামীকেই আটক করে পুলিশ টাকা চাইবে কেন? জানতে চাইলে সাথী বলেন, তারা গরিব মানুষ। শুরুর দিকে বিষয়টি তারাও বুঝতে পারেননি। পরে এলাকার লোকজনের কাছে বিষয়টি জানালে জানতে পারেন পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা তাদের টিম নিয়ে এলাকায় এভাবেই মানুষকে ধরে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবের মা নাছিমা বেগম বলেন, তার ছেলে নির্দোষ। এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। এরপরও পুলিশ হেরোইনের মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। তিনি এলাকার লোকজনের সহায়তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার এবং মিরপুর বিভাগের ডিসির কাছে দরখাস্ত করেছেন। এরপরও কিছুই হচ্ছে না।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ছেলে মাদকের ব্যবসায়ী হলে পুলিশ মেরে ফেলুক, কোনো দাবি থাকবে না। নির্দোষ হলে এমন ঘটনার বিচার চাই।
পরিবার আরও দাবি করছে, হাবিব শেখকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মামলায় বলা হয়েছে ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে হাবিব শেখ ছাড়াও ফরিদ ওরফে হিরোঞ্চি ফরিদ পল্লবীর রাশাদ মার্কেটের সামনে হেরোইন বিক্রি করছিল। তখন অভিযান চালিয়ে ফরিদের কাছ থেকে ৫০ গ্রাম ও হাবিবের কাছ থেকে ৪৫ গ্রাম হেরোইন জব্দ করা হয়। মামলায় মিজান মোল্লা ও মো. সাইমন নামে অপর একজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এজাহারে থাকা তাদের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও সেটি পাওয়া যায়নি। মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারীকে শনাক্তের অ্যাপস ‘ট্রু-কলার’ দিয়ে দেখা যায়, মিজানের নামের পর সোর্স লেখা রয়েছে।
এদিকে হাবিবের স্ত্রী ও মায়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত এসআই রায়হানুর রহমান দাবি করেন, হাবিব শেখ তালিকাভুক্ত হেরোইন কারবারি। কিন্তু তিনি এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কিনা বা তার বিরুদ্ধে মাদকের পুরোনো মামলা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা এলাকায় এসে খোঁজ নিতে বলেন।
গ্রেপ্তারের পর তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও তা না পেয়ে নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে এসআই রায়হান বলেন, মাদক কারবারিরা ধরা পড়লে তাদের পরিবার এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগই করে। এগুলো পুরোনো বিষয়।