ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

কিশোরের হাতে কেন স্টিয়ারিং

কিশোরের হাতে কেন স্টিয়ারিং

মাহজাবিন আলমগীর

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ | ০৭:৪৪

গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে এক বেপরোয়া প্রাইভেটকারের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন এক অসহায় রিকশাচালক আর রিকশায় বসা তিন সহযাত্রী। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন সবাই। সমকালের খবর অনুসারে গাড়িটি চালাচ্ছিল এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর। এর আগেও এই কিশোর রাস্তায় এভাবে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়েছে। ৩ অক্টোবর সমকালের আরেক খবরে প্রকাশ, মোহাম্মদপুরের বছিলা হাউজিং এবং ঢাকা উদ্যান এলাকায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন সাধারণ পথচারী। এলাকাটি নাকি কিশোর অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

এগুলো কি সমাজের বিচ্ছিন্ন ঘটনা? আমরা যারা আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে বড় হয়ে উঠেছি তারা জানি, গত ১৫-২০ বছরের ভেতরের এখনকার কিশোর তরুণদের জীবনযাত্রায় কী আমল পরিবর্তন এসেছে। তাদের পরিবর্তন এসেছে সাংঘাতিকভাবে, তাদের মনমানসিকতায়।

আরও আগে পাড়ার যে ছেলেটি বিকেল ৬টার মধ্যে পড়াশোনা, বন্ধুদের আড্ডা কিংবা খেলাধুলা করে ঘরে ফিরত তাদের অনেকের এখন সময়ের বালাই নেই। সপ্তাহে দু’তিন দিন পিৎজা হাট কিংবা কেএফসিতে না খেলে স্ট্যাটাসই থাকে না। মা-বাবা তাদের ফোন ধরতে পারবেন না, তাদের রাত জাগা নিয়ে কিছুই বলতে পারবেন না। তাদের ঘরের জিনিসপত্রে হাত দিতে পারবেন না। সর্বত্র তারা কেবল প্রাইভেট খুঁজে বেড়ায়। শুধু আমি আর আমার– এর বাইরে কিছু বোঝে না এখনকার টিনএজ প্রজন্ম। পান থেকে চুন খসলেই এদের প্রচণ্ড রাগ আর বিরক্তি। সে রাগ বিরক্তি এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে, তুচ্ছ ঘটনার কারণে এক কিশোর আরেক কিশোর বন্ধুকে গলা টিপে মেরে ফেলতে পিছপা হয় না।

মা-বাবা ছোট থেকেই মগজে ঢুকিয়ে দেয় যে কোনোভাবেই সফল হওয়া চাই। সারাক্ষণ সফলতার কথা ভাবতে ভাবতে তারা ক্লান্ত, তাই মানসিকতার থেকে মনোরঞ্জনটাই মুখ্য তাদের জীবনে। তাই তো তারা ডিজে পার্টি করে যতটা সম্ভব আনন্দ-ফুর্তি করে নেয়। লাইসেন্স হওয়ার বয়স না হতেই রাস্তায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি ড্রাইভ করে তাতে যদি দু’একজন রিকশাচালক কিংবা পথচারী আহত বা নিহত হন তাতে তাদের বিবেকের কিছু আসে যায় না! কারণ তার ছেলেবেলা থেকেই জেনে এসেছে, তাদের বাবারা কেমন আইন পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, অপরাধ করেই কেমন পার হওয়া যায়।

এখান থেকেই তৈরি হচ্ছে সামাজিক উগ্রতা, যার প্রকাশ হয় লাগামছাড়া উচ্ছ্বাসের ভেতর দিয়ে। যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেটি সেদিন গাড়ি চালাচ্ছিল, সে তো জানত ড্রাইভিং করার নির্দিষ্ট বয়স থাকে কিন্তু কাঁচা বয়সে তাদের এই দুঃসাহস জোগান তাদের অভিভাবকরা। মানুষ যে সামাজিক জীব এ ধারণাটাই ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সেই প্রজন্মের কাছে নিজের ভালো থাকা, নিজের খুশি নিজের ফুর্তি করতে গিয়ে অন্য কারও যদি ক্ষতি হয় তাতে কিছুই আসে যায় না; তারা জেনে গেছে সুখ মানেই ভোগ ভোগ আর ভোগ এটাই জীবনের প্রথম আর শেষ কথা।

জটিলেশ্বর মুখার্জির একটি বিখ্যাত গান আছে, ‘এ কোন সকাল,/ রাতের থেকেও বেশি অন্ধকার।’ জাতির জীবনে নতুন সূর্যোদয় হবে যে নবপ্রজন্মের হাত ধরে, সেই প্রজন্ম তো কেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে? আমরা অভিভাবকরা সমাজ রাষ্ট্রপদের কোনোই আলোর দিশা যেন দেখতে পারছি না। মাহজাবিন আলমগীর: সংগীত শিক্ষক, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

আরও পড়ুন

×