ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পায়: পরিকল্পনামন্ত্রী

বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পায়: পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২২ | ০৮:৫০ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২২ | ০৮:৫০

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি গুরুত্ব পায় বেশি। বলা যায়, এটি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিষয়। এই বরাদ্দ দিতে গিয়ে সরকার এক ধরনের ‘ঠেকা’র মধ্যে পড়ে। কায়েমি স্বার্থ বরাদ্দ বিভাজনকে প্রভাবিত করে। বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা গণতান্ত্রিক সমাজে থাকা উচিত নয়। হঠাৎ করে এই বেড়াজাল ভাঙা সহজ নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেষ্টা করছেন। আশা করা যায় তিনি সফল হবেন।

রোববার ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। আইসিএবি সভাপতি শাহাদাৎ হোসেনের সভাপতিত্বে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনে ‘সামষ্টিক অর্থনীতি: ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রত্যশা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়।

পুরো আলোচনায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিদ ও হিসাববিদরা রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার, করপোরেট কর কমিয়ে আনা, করোনা প্রভাব মোকাবিলা এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হওয়া নতুন বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে করণীয়, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি, এসএমই খাতের বিকাশ, সরকারি ব্যয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার খুবই জরুরি। অনুৎপাদনশীল খাতে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া অন্যায়। তিনি বলেন, অনেক সমস্যার মধ্যেও বর্তমান সরকার গত ১০ বছরে লক্ষ্যমান, দৃশ্যমান ও প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন করেছে। অনেকে সমালোচনা করেন। কিন্তু উন্নয়ন অস্বীকার করতে পারবেন না। দেশে ব্যবসায়, পরিবেশে সমস্যা আছে। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে একটি শ্রেণি বলছে- তারা নির্বাচনে যাবেন না, সংবিধান মানেন না, নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এসব যারা বলেন, তারা খেলা ভন্ডুল করতে চান। এসব লোককে ভন্ডুল করার প্রয়াস থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এ ধরনের মতামতের বিষয়ে দেশের ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজকে মতামত জানানোর আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য দেন আইসিএবি সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, দেশ এগোচ্ছে। তবে বৈষম্যও বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে পরোক্ষ কর। তিনি প্রত্যক্ষ কর ও অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিবর্তে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, বাজেটে থেকে যে বিনিয়োগ হয় সেখানে সংস্কার দরকার। শিক্ষা খাতের জন্য পূর্নাঙ্গ বাজেট দিতে হবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুচিন্তিত পদক্ষেপ দরকার। আমদানি ব্যয় বেড়েছে। রিজার্ভ খরচের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। এখন সুদহারে সর্বোচ্চ সীমা রাখা ঠিক হবে না।

এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার। কারণ এই পরিকল্পনা যখন করা হয়েছিল তখন করোনা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ছিল না।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশের বেশি ধরা ঠিক হবে না।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনূসুর রহমান বলেন, খাদ্য উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সে উদ্যোগ দরকার। পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম সমন্বয় করতে হবে।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, অগ্রিম আয়কর নেওয়া বন্ধ করতে হবে। অগ্রিম আয়কর বাবদ যে টাকা সরকারের কাছে যেত সেই টাকা কোম্পানিগুলো যাতে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি উৎসে কর নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার ই-কমার্স খাতে কর কমানো ও দক্ষতা উন্নয়নের প্রস্তাব করেন।

প্রথম আলোর অনলাইন বিভাগের প্রধান শওকত হোসেন মাসুম ব্যাংক কমিশন ও সরকারের ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন গঠনের পরামর্শ দেন।

আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আইসিএবির সিইও শুভাশীষ বসু, ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।

আরও পড়ুন

×