ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

আইসিএবির বাজেট বিশ্নেষণ

রপ্তানি খাতে অভিন্ন কর হার এফডিআই বাড়াবে

রপ্তানি খাতে অভিন্ন কর হার এফডিআই বাড়াবে

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২২ | ২০:৫৪ | আপডেট: ১১ জুন ২০২২ | ২০:৫৪

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্প ও সেবা খাতে অভিন্ন হারে করপোরেট কর নির্ধারণের ফলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট হবে। স্থানীয় বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন উদ্যোক্তারা। এতে একক পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমানোর সুযোগ তৈরি হবে। রপ্তানি পণ্যে দীর্ঘদিনের বৈচিত্র্যহীনতার সংকটও এতে ঘুচবে। পোশাকের মতো সম্ভাবনাময় অন্যান্য শিল্পের রপ্তানি বাড়ালে দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনে চলতি হিসাবের ঘাটতিও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। সার্বিক কর্মসংস্থান এবং দেশের ক্রেডিট রেটিংয়েও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বাজেটীয় এ পদক্ষেপ।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্নেষণে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সংস্থার সভাপতি মো. শাহাদাৎ হোসেন। এ ছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবীর, কাউন্সিল সদস্য সাব্বির আহম্মেদ, স্নেহাশীষ বড়ূয়া ও প্রধান নির্বাহী শুভাশীষ বসু। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আইসিএবির কার্যালয়ে 'প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ভাবনা' শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে রপ্তানিমুখী সব ধরনের পণ্য এবং সেবায় সবুজ প্রযুক্তির কারখানার ক্ষেত্রে ১০ এবং সাধারণ কারখানার ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ হারে করপোরেট কর ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতদিন কেবল তৈরি পোশাক খাতই এ সুবিধা পাচ্ছিল। তৈরি পোশাকবর্হিভূত খাতে এ ধরনের করের হার ৩০ শতাংশ ছিল।

অতিমারি করোনার প্রকোপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং খাদ্য, জ্বালানি তেল ও বিভিন্ন পণ্যের মূল্যস্ফীতিসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে দেওয়া প্রস্তাবিত বাজেটকে সার্বিক বিবেচনায় যুগোপযোগী বলা হয়েছে আইসিএবির পক্ষ থেকে।

আইসিএবির মতে, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে করের আওতা সম্প্রসারণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বাজেট ঘাটতি কমাতে এ বিষয়ে সরকারকে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। কর আদায় সংক্রান্ত নথি যাচাইকরণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং আইসিএবির যৌথ উদ্যোগ সহায়ক হতে পারে বলে মনে করেন আইসিএবি সভাপতি। এ প্রসঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে আয়কর আইন এবং মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন প্রয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অনুমোদিত প্রতিনিধি পরামর্শক হিসেবে অনুশীলনকারী পেশাজীবীদের প্রতিনিধিত্ব রাখার প্রস্তাব করেন তিনি। বাজেট উপস্থাপনের আগে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক্ক আইন ও বিধিমালার বিষয়ে আইসিএবির দেওয়া অনেক প্রস্তাবই গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাড়ে সাত শতাংশ হারে কর দিয়ে পাচার করা অর্থ দেশে আনার যে সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে তারও প্রশংসা করেছে আইসিএবি। এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থার সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, নীতিনৈতিকতার বিচারে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। তবে বাস্তবতার বিচারে বাজেটে এ প্রস্তাবকে সমর্থন করেন তারা। চলে যাওয়া অর্থ কিংবা বিদেশে অর্জিত সম্পদ দেশে ফেরত আনা সম্ভব হলে তা মন্দ নয়। সব সময়ের জন্য নয়, একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এ ধরনের সুযোগ রাখা যেতে পারে। পাচার রোধে সরকারের সব ধরনের নিয়ন্ত্রণ কাঠামো সক্রিয় রয়েছে।

বাজেটে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিদ্যমান বাজার বাস্তবতায় এটা কতটা বাস্তবসম্মত- এ প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবীর বলেন, সরকারের এ প্রত্যাশাও অবাস্তব নয়। বিষয়টি নির্ভর করছে আগামীতে বৈশ্বিক পরিস্থিতি কেমন যাবে তার ওপর। পরিস্থিতি অনুকূল হয়ে এলে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।

আইসিএবির সহসভাপতি কে এ মুবিন, কাউন্সিল সদস্য আব্দুল কাদের জোয়ার্দ্দার, কাউন্সিল সদস্য এমবিএম লতিফুল হাদি, চিফ অপারেটিং অফিসার মাহবুব আহম্মেদ সিদ্দিকীসহ সংস্থার ঊর্ধ্বতনরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

×