ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ঋণ দিতে আগ্রহী আইএমএফ, মিশন আসছে এ মাসেই

ঋণ দিতে আগ্রহী আইএমএফ, মিশন আসছে এ মাসেই

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২ | ১৪:৩২

বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা এবং বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ঋণ দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা চলাকালে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে ঋণ দেওয়ার আগ্রহের কথা জানানো হয়েছে। সভা চলাকালে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাইডলাইন আলোচনায়ও আইএমএফের কর্মকর্তারা এমন বার্তা দিয়েছেন। তবে ঋণ নিয়ে আনুষ্ঠানিক নেগোসিয়েশন বা আলোচনার আগে সংস্থাটি কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে।

গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব এবং এ দেশের অর্থনীতি কোন অবস্থায় আছে- এমন প্রশ্নের উত্তর দেন আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের উপপরিচালক আন-মারি গাল্ড-উলফ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আইএমএফের একটি কর্মসূচি থেকে ঋণ চেয়েছে, যার দুটি উপাদান রয়েছে। এর একটি হলো নিয়মিত আপার-ক্রেডিট ট্রাঞ্চ (ইউএইচটি) এবং অন্যটি হলো রেজিলিয়েন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট ফান্ড। তাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের জন্য মিশন বা প্রতিনিধি দল ঠিক করেছেন। আগামী সপ্তাহে মিশন কাজ শুরু করবে। এরই মধ্যে ওয়াশিংটনে বার্ষিক সভায় যোগ দেওয়া বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে।

ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনের পর দেশে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইএমএফ মিশন ঢাকায় আসছে আগামী ২৭ অক্টোবর। তাঁরা ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

আইএমএফের ওই কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করে এমন প্রধান প্রধান দেশের অর্থনীতি ইতোমধ্যে সমস্যায় পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে টাকার প্রায় ২০ শতাংশ পতন হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনও স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে, তবে এটি কমে যাওয়ার প্রবণতার দিকে রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সন্তুষ্ট যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ একটি অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় সম্পৃক্ত হতে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে। এ কর্মসূচি অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং আরও নিম্নগতি ঠেকাতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত ১০ থেকে ১৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগ দেয়। জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে আইএমএফের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা ঋণ দিতে আগ্রহী। তবে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনা ও রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে কিছু বিষয়ে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। ঢাকায় আগত মিশন এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে।

গত জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এর আগে আইএমএফের 'আর্টিক্যাল-ফোর' নামে অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনার মিশন ঢাকায় আসে। ওই মিশনের সমাপনী বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে।

আইএমএফ মনে করে, এ মুহূর্তে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে সুরক্ষা দেওয়া খুব জরুরি। কারণ বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বেশ চাপের মধ্যে আছে। এ ছাড়া আর্থিক খাতে আরও কিছু সংস্কার জরুরি। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিং করা উচিত। রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশে অনেক কম। ভ্যাটের হার কাঠামো সহজ করা, পুরো রাজস্ব সংগ্রহ পদ্ধতির আধুনিকায়নসহ রাজস্ব প্রশাসনে আরও সংস্কার আনার পরামর্শ রয়েছে আইএমএফের।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত এক বছরে কমেছে ১০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। গতকাল রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৬.২১ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা অংশকে হিসাব থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে আইএমএফের।

আরও পড়ুন

×