চার মাসে সংগ্রহ করতে হবে পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ২১:১৬
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে। অন্যান্য বছর সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলেও বেশি রাজস্ব প্রাপ্তির তাগিদ থেকে এবার কমানো হচ্ছে না। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে বাকি চার মাসে এনবিআরকে ১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে।
গত বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সংশোধিত বাজেট এনবিআরের অংশের লক্ষ্যমাত্রাও একই থাকছে। রাজস্ব সংগ্রহে না কমলেও সরকারের মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরেরর লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। সংস্থাটি গত আট মাসে রাজস্ব আদায় করেছে ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এনবিআরকে গড়ে প্রতি মাসে ৪৩ হাজার ৫০০ কোট টাকা সংগ্রহ করতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্য বাড়তে থাকায় ডলারে টান পড়ায় সরকার গত বছরের এপ্রিল থেকে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। এর ফলে আমদানি কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশিত গতি আনতে আদায় সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। বৈঠকে রাজস্ব আদায়ে গতি না আসার কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, আমদানি কমায় রাজস্ব আদায় বাড়ানো চ্যালেঞ্জিং। তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), পেট্রোবাংলাসহ যাদের কাছে বড় অঙ্কের বকেয়া রয়েছে, তা আদায়ে মনোযোগী হওয়া এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদায় বাড়ানো যেতে পারে। অর্থবছরের বাকি সময়ে লক্ষ্যমাত্রার পুরোটা অর্জন সম্ভব না হলেও কাছাকাছি থাকবে বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দু-তিনবারে কর পরিশোধ না করে একবারেই দিয়ে থাকে। তাই অর্থবছরের শেষ কয়েক মাসে রাজস্ব সাধারণত বেশি আদায় হয়। তাছাড়া অর্থবছরের শেষ দিকে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার তাড়া থাকে। এ কারণেও শেষ দিকে রাজস্ব আদায় বাড়ে।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সমকালকে বলেন, স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে শেষের দু-তিন মাসে রাজস্ব বাড়ে। তবে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ অবস্থায় নাটকীয়ভাবে রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ নেই। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা না কমলেও সরকারের ব্যয়ে কিছুটা কাটছাঁট করে ১৭ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। তাই সংশোধিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা কমে দাঁড়াচ্ছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৮ কোটি টাকায়। পরিচালন বাজেটের আকার কিছুটা বেড়ে হচ্ছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে।