পোশাক রপ্তানিতে ওভেনের অংশ কমছে, বাড়ছে নিটের

আবু হেনা মুহিব
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০
রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাকনির্ভরতা আরও বেড়েছে। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের মোট রপ্তানি আয়ে পোশাকের অবদান বেড়ে প্রায় ৮৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, আগের অর্থবছর যা ছিল ৮২ শতাংশের কিছু কম। পোশাকের মধ্যে আবার ওভেন অর্থাৎ শার্ট-প্যান্টের চেয়ে নিট ক্যাটাগরি অর্থাৎ গেঞ্জি ধরনের পণ্যের দাপট বাড়ছে। গত অর্থবছরে পোশাকের মোট রপ্তানি আয়ে নিটের অংশ ৫৪ শতাংশের বেশি, ওভেনে যা ৪৬ শতাংশের কিছু কম।
ওভেনের চেয়ে নিটের রপ্তানি বেশি হলে সুবিধা বেশি। ওভেনের চেয়ে নিটের স্থানীয় মূল্য সংযোজন বেশি হয়। নিটের মূল্য সংযোজন এখন প্রায় ৯০ শতাংশ। ফলে পরিমাণে আমদানিও কম করতে হয়। তাই দেশের অর্থ দেশেই থাকে। এ ছাড়া নিটের পশ্চাৎসংযোগ শিল্প বেশ শক্তিশালী। এতে ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর স্থানীয় উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে পণ্য তৈরি করা যায়। এতে লিড টাইমের সুবিধা পাওয়া যায়। লিড টাইম হচ্ছে, রপ্তানি আলোচনা থেকে রপ্তানি আদেশ পাওয়া এবং ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছানো পর্যন্ত প্রক্রিয়ার মোট সময়। অন্যদিকে ওভেনের মূল্য সংযোজন ৪০ শতাংশের মতো। অর্থাৎ এ খাতের বাকি ৬০ শতাংশ আমদানিনির্ভর। এ বাবদ বড় একটা অংশ ব্যয় হয়। আবার লিড টাইমের সুবিধাও কম।
কারণ কাঁচামাল আমদানিতে অনেক সময় ব্যয় হয়। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে নিট পোশাক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, ফ্যাশন দুনিয়ায় ফরমাল পোশাকের চেয়ে ক্যাজুয়াল পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। পশ্চিমারা এখন ক্যাজুয়াল ড্রেসেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। অফিসও করছে এ রকম সাধারণ পোশাকে। এ ছাড়া করোনাকালে মানুষ ঘরে বেশি সময় কাটিয়েছে। ঘরে ব্যবহার্য পোশাক হিসেবে নিটের চাহিদা বেড়েছে। তিনি বলেন, আগামীতে ওভেনের চেয়ে নিটের চাহিদা এবং রপ্তানি আরও বাড়বে। তাঁর যুক্তি, একেতো ভোক্তা পর্যায়ে নিট পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। আবার কৃত্রিম তন্তুর ম্যানমেইড পোশাকের একটা বড় অংশই নিট ক্যাটাগরিভুক্ত। এ ধরনের পণ্যের চাহিদা এখন বেশি। ম্যানমেইড পোশাকের মূল্যও অনেক বেশি। এ দুই প্রধান সুবিধায় রপ্তানিতে নিটের হিস্যা আগামীতে আরও বাড়বে।
নিট পোশাকের মধ্যে প্রধান পাঁচ পণ্য হচ্ছে– বিভিন্ন ধরনের টি-শার্ট, পলো শার্ট, ট্রাউজার, সোয়েটার ও জ্যাকেট। গত অর্থবছরে ২ হাজার ৫৩৮ কোটি ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে। ওভেনে হয়েছে ২ হাজার ১২৫ কোটি ডলার। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস গত জুলাইয়ে নিট ও ওভেনের হিস্যায় ব্যবধান আরও বেড়েছে। মাসটিতে নিটের রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে ওভেনের রপ্তানি বেড়েছে ১২ শতাংশের কিছু কম। ওভেন ক্যাটাগরির প্রধান পণ্যের মধ্যে রয়েছে শার্ট, প্যান্ট, ডেনিম ও পার্টি ড্রেস, স্যুট ইত্যাদি।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদ উল্লাহ আজিম সমকালকে বলেন, নিটের সঙ্গে ওভেনের রপ্তানিও বাড়ছে। তবে স্থানীয়ভাবে নিটের কাঁচামালের জোগান দিন দিন বেড়ে যাওয়ার সুবিধায় তুলনামূলক নিট এগোচ্ছে বেশি হারে। কাঁচামাল স্থানীয় বাজার থেকে পাওয়া গেলে ওভেনের রপ্তানি আরও বাড়বে। এজন্য ওভেনের পশ্চাৎসংযোগ শিল্পে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।
চলতি অর্থবছর তৈরি পোশাক থেকে ৫ হাজার ২২৭ কোটি ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে নিটে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৮৪৩ কোটি ডলার। ওভেনে ২ হাজার ৩৮৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।
- বিষয় :
- পোশাক রপ্তানি
- রপ্তানি খাত
- তৈরি পোশাক