সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মেজবাউল হক
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৪ | ২২:৪৩
বৈশ্বিকভাবে প্রচলিত নিয়ম ও দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা হবে। এ ক্ষেত্রে আমানতকারীর সুরক্ষা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। ফলে একীভূতকরণ নিয়ে আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ ছাড়া ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত লাল, হলুদ ও সবুজ তালিকাটা সঠিক পদ্ধতির আলোকে প্রস্তুত হয়নি। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য এটি ছিল ধারণাভিত্তিক একটি প্রতিবেদন।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক এক জরুরি প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক এক গোপন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক রিপোর্টের ব্যাখ্যা দিতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিবেদনে ব্যাংকের ঝুঁকি বিবেচনায় ৯টি ব্যাংককে রেড জোন তথা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। মাঝামাঝি ঝুঁকি বিবেচনায় ইয়েলো জোন তথা হলুদ তালিকায় ২৯টি ও ১৬টি ব্যাংককে সবুজ তথা ভালো ব্যাংকের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছয়টি অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্কোরিংয়ের মাধ্যমে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মেজবাউল হক বলেন, অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য এ রকম বিভিন্ন প্রতিবেদন করা হয়। ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য পরিমাপের একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা হলো ‘ক্যামেলস’ রেটিং। সেখানে প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রকৃত চিত্র থাকে। তবে তা কখনও প্রকাশ করা হয় না। তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই প্রতিবেদন ভুয়া কিনা কিংবা যারা প্রস্তুত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ধারণাভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। এটিও সে রকম একটি প্রতিবেদন। এটি গ্রহণযোগ্য কোনো রিপোর্ট নয়।’
মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে অনেকে বলছেন, রেড জোনের ব্যাংক একীভূত হবে। একীভূত হলে আমানতকারীর কী হবে, ভালো ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংক একীভূত হলে ভালো ব্যাংকও খারাপ হবে কিনা– এ রকম বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, একীভূতকরণের ক্ষেত্রে আমানতকারীর সুরক্ষা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংকের একটি খারাপ দিক ও ভালো দিক থাকে। এখন দুর্বল ব্যাংকের ভালো দিক যদি ভালো ব্যাংকে যোগ হয়, তার অবস্থা আরও ভালো হবে– এটাই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হলে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার রেকর্ডই বেশি। আর ব্যাংক একীভূত করার আগে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে অডিট করে সম্পদ মূল্যায়ন করা হবে। এরপর প্রথাগত বৈশ্বিক অনুশীলন ও দেশীয় বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে একীভূত করা হবে। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিক থেকে কিছু ছাড় দেওয়া হবে। আর যেসব পরিচালকের কারণে ব্যাংকটি খারাপ হলো, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব নিয়ে প্রতিটি পর্যায়ে আলাদা আলাদা নীতিমালা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ইতোমধ্যে একটি ‘পিসিএ’ ফ্রেমওয়ার্ক দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, মূলধন, ব্যবস্থাপনা ও তারল্য পরিস্থিতির আলোকে কোন ব্যাংক দুর্বল– এখনই দেখতে পারে। দুর্বল ব্যাংক যদি নিজ থেকেই আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারে, তখন তার আর একীভূতকরণের দরকারই হবে না। আর অবস্থার উন্নতি না হলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি ব্যাংক আরেক ব্যাংকের সঙ্গে নিজেই একীভূত হতে পারে। এখন নিজ থেকে একীভূত না হলে আগামী ডিসেম্বরের আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যায়ন শুরু করবে। তখন আর ব্যাংকের হাতে কোনো ‘অপশন’ থাকবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন বাধ্যতামূলক একীভূত করে দেবে।
- বিষয় :
- বাংলাদেশ ব্যাংক