ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কাঁচামালের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত নয় আমিনবাজার

এফবিসিসিআইর সভায় কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা

কাঁচামালের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত নয় আমিনবাজার

এফবিসিসিআইর সভায় কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা - সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ২১:৫১ | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ২২:১৪

কাঁচামাল পরিবহনে দৈনিক শত শত ট্রাক ঢোকে কারওয়ান বাজারে। এ বাজারের চারপাশজুড়ে ১৫ থেকে ২০টি সংযুক্ত সড়ক রয়েছে। ফলে সহজে ট্রাক ঢুকতে পারে। তবে আমিন বাজারের নির্মিত আড়তে ট্রাকগুলোকে একটি সড়ক দিয়ে প্রবেশ ও বের হতে হবে। ফলে সেখানকার এলাকাজুড়ে ট্রাকের বিশাল জটলা লেগে থাকবে সব সময়। তাতে পণ্য পচে যাবে। ফলে আমিন বাজারে কোনোভাবেই কাঁচামালের ব্যবসা করা সম্ভব হবে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটে নিত্যপণ্য সামগ্রীর আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। 

সভার আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। নিত্যপণ্য নিয়ে সভার আয়োজনা করা হলেও সেখানে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল কাঁচামালের আড়ত তুলে দেওয়ার বিষয়টি। ঘুরেফিরে ব্যবসায়ী নেতা ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা আড়ত না সরানোর বিষয়ে কথা বলেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি আমিন হেলালী বলেন, ভোক্তাদের অধিকার যেন কোনোভাবে ক্ষুণ্ন না হয়, সেটি ব্যবসায়ীদের মাথায় রাখতে হবে। গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে সব ব্যবসায়ীর সম্মান ক্ষুণ্ন করা যাবে না। এসব অসাধু ব্যবসায়ীর পক্ষ নেবে না এফবিসিসিআই।

তবে কারা অসাধু ব্যবসায়ী তা বাজার কমিটিগুলোর নেতারা জানেন। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে যারা কালোবাজারি করবে, কারসাজি করবে তাদের অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমেও শনাক্ত  করার কাজ চলছে।

কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের সঠিক সংখ্যা জানতে তালিকা প্রণয়নের আহ্বান জানান আমিন হেলালী। সমিতির নেতাদের তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা সমিতির অন্তর্ভুক্ত নয়, তাদের অন্তর্ভুক্তি করতে হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারের সঙ্গেও সমঝোতা করা সহজ হবে।

কাঁচামালের আড়ত তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এখানে যারা ব্যবসা করেন তারা যতটা বাস্তবতা বা এর পরিস্থিতি বোঝেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়তো তা অনুধাবন করতে পারছেন না। আড়ত নিয়ে এখানে কী হতে যাচ্ছে, আড়ত সরালে কী সুবিধা-অসুবিধা হবে, কীভাবে স্থানান্তর করা সহজ হবে– সেসব বিষয়ে বিস্তারিত লিখিত আকারে দিলে তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে এফবিসিসিআই।

কিচেন মার্কেটের ইসলামিয়া শান্তি সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রবেশের জন্য ১৫ থেকে ২০টি রাস্তা আছে। ট্রাকাগুলো সুবিধামতো যে কোনো সড়ক দিয়ে প্রবেশ কিংবা বের হতে পারে। আমিনবাজারে তা সম্ভব নয়। ফলে সেখানে কোনোভাবেই কাঁচামালের ব্যবসা করা যাবে না। কারণ সেখানে একই সড়ক দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাককে প্রবেশ ও বের হতে হবে। তাতে মার্কেট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে ট্রাকের জটলা লেগে যাবে। যার রেশ বিস্তৃত হবে পুরো এলাকায়। তাছাড়া কাঁচামালের জন্য পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের দরকার হয়। নতুবা পণ্য পচে যাবে। তাই কৃষকের তাজা সবজি ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর জন্য কারওয়ান বাজারের বিকল্প নেই।

পাকা আড়ত ভবন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সুজন বলেন, দীর্ঘ সময় এখানে ব্যবসা করছেন হাজার হাজার ব্যবসায়ী। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন লাখ লাখ শ্রমিক। এ বাজার ঘিরে গড়ে উঠেছে ব্যাংক, রেস্তোরাঁসহ নানা ব্যবসা। এখান থেকে বাজার তুলে দেওয়া হলে হাজার হাজার ব্যবসায়ী তাদের পুঁজি হারাবেন। বেকার হবেন লাখ লাখ শ্রমিক। শুধু তাই-ই নয়, কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচামালের আড়ত সরালে পুরো দেশে সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতি একটা প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সুজন আরও বলেন, গত জানুয়ারিতে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, কারওয়ান বাজারের স্থায়ী বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীদের যাত্রাবাড়ীতে নেবেন। এখন বলা হচ্ছে, আমিনবাজারে নেওয়া হবে। কাঁচামালের ব্যবসা করার মতো সেই পরিবেশ নেই সেখানে।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, অনেকেই  দোষারোপ করে বলেন, কারওয়ান বাজারের কারণে ঢাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। তাই এটা তুলে দিতে হবে। কোনো রোগীর মাথায় সমস্যা হলে তার মাথা কেটে ফেললে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। তাই কারওয়ান বাজার তুলে দিলে ঢাকার যানজট নিরসন হয়ে যাবে– এ ধারণা ভুল।

কারওয়ান বাজার কাঁচামালের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, পণ্যের সংকট দেখা দেওয়ার আগেই আমদানি করা দরকার। যেমন– এখন আলুর বাজারে কিছুটা টান আছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া উচিত।

ভোক্তা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, আইনের বাইরে কোনো ধরনের অভিযান বা জরিমানা করার সুযোগ নেই। যাদের ট্রেড লাইসেন্স নেই তাদের প্রকৃত ব্যবসায়ী বলবে না অধিদপ্তর। তাছাড়া পণ্যমূল্য ঠিক রাখলে এবং ভোক্তারা কোনোভাবে প্রতারিত না হলে অধিদপ্তর অভিযানে যাবে না।  

আরও পড়ুন

×