ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

চার্জার ফ্যানের ‘গলাকাটা’ দাম, বিক্রিও তুঙ্গে

চার্জার ফ্যানের ‘গলাকাটা’ দাম, বিক্রিও তুঙ্গে

প্রতীকী ছবি

জসিম উদ্দিন বাদল

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:৩৮

কয়েক দিন ধরে সারাদেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে কোনো কোনো এলাকায় থাকে না বিদ্যুৎ। তীব্র গরমে যেন ওষ্ঠাগত প্রাণ। গরমের এই তীব্রতা থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে ক্রেতারা ছুটছেন চার্জার ফ্যান-এসির দোকানে। মধ্যবিত্তদের অনেকে কিনছেন এয়ার কন্ডিশনার বা এয়ার কুলার, খুঁজছেন আইপিএসও। নিম্নবিত্তরা ভিড় জমাচ্ছেন চার্জার ফ্যানের দোকানে। তাতে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। ব্যবসায়ীরা চার্জার ফ্যানের ‘গলাকাটা’ দাম নিচ্ছেন অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।   

খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এজন্য দুষছেন আমদানিকারকদের। তাদের দাবি, ঈদের আগেও চার্জার ফ্যানের বাজার স্থির ছিল। দুই-তিন দিন আগে হঠাৎ করে দাম বাড়ান আমদানিকারকরা। দর কষাকষির কোনো সুযোগ নেই, বরং কোনো ফ্যানের মান খারাপ হলেও সেটি ফেরত নিচ্ছেন না তারা। গত দুই দিনে কোনো কোনো ফ্যানে দাম বেড়েছে হাজার টাকার বেশি।  

গতকাল রাজধানীর নবাবপুর, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, চার্জার ফ্যান, স্ট্যান্ড ফ্যান, সিলিং ফ্যান, আইপিএস, এসির দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে চার্জার ফ্যানের দোকানে ভিড় দেখা গেছে তুলনামূলক বেশি।
বেশির ভাগ চার্জার ফ্যান চীন থেকে আমদানি করা। বর্তমানে বিভিন্ন আকার ও ব্র্যান্ডের চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকায়। হাতে নিয়ে চলা যায়, এমন ছোট ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়।

গতকাল সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট থেকে ৪ হাজার ৫০ টাকায় ছোট আকারের একটি ফ্যান কেনেন মালিবাগ থেকে আসা ক্রেতা আব্দুর রহমান। সমকালকে তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে দাম দেখে গেলাম তিন হাজার টাকা। আজ কিনতে হলো এক হাজার টাকা বেশি দিয়ে।’

দাম বাড়ার বিষয়ে সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটের বিজয় ইলেকট্রিকের স্বত্বাধিকারী ইমতিয়াজ বিজয় বলেন, ‘গরমের মাত্রা যত বাড়ে, আমদানিকারক ও পাইকাররা চার্জার ফ্যানের দাম তত বাড়ান। যেমন, হাতে নিয়ে ঘোরা যায়, এমন ছোট একটা রিচার্জেবল ফ্যানের দাম এক দিনের ব্যবধানে ৫০ টাকা বাড়িয়েছেন তারা। গত শনিবার ১৭০ টাকা ছিল, আজ (রোববার) কিনতে হয়েছে ২৩০ টাকায়।’ তিনি বলেন, চীন থেকে আমদানিকারকরা আনার পর আরও দু-এক হাত ঘুরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে আসে। ফলে দাম বেড়ে যায়।

নোমান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, শহরে লোডশেডিং না থাকলেও গ্রামে আছে। তাঁর বিক্রি বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। তিনি বলেন, গুটি কয়েকজন চার্জার ফ্যান আমদানি করে। তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়ান। দর কষাকষি কিংবা কার্টন খুলে দেখার ‍সুযোগ নেই। খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামেই কিনতে বাধ্য হন।

চীন থেকে যারা এসব ফ্যান আমদানি করেন, তাদের বেশিরভাগই নবাবপুরের মোজাম্মেল অ্যান্ড রুহুল আমিন ইলেকট্রিক মার্কেটের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার একজন পাইকারি ব্যবসায়ী সমকালকে বলেন, এই মার্কেটে তিনজন শীর্ষ আমদানিকারক আছেন। তাদের মর্জিমতো দাম নির্ধারণ হয়। গরমের তীব্রতা বাড়ায় গত দুই-তিন দিনে সব ধরনের চার্জার ফ্যানের দাম বাড়িয়েছেন তারা। এমনও ঘটেছে, সকালে একটি চার্জার ফ্যানের পাইকারি দর ছিল ৩ হাজার ৫০ টাকা। কিন্তু একই ভাউচার নিয়ে সন্ধ্যায় ফ্যান আনতে গেলে ওই দরে দেওয়া হয়নি। প্রতিটি ফ্যানে অতিরিক্ত ২০০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, ‘এখন তো ঢাকায় লোডশেডিং নেই। গরমের কারণে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো অন্যায়। ভোক্তা অধিদপ্তর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। এতে আমাদের আপত্তি নেই।’
সংগঠনটির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। যারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন, নবাবপুরের সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের বিপক্ষে। এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা দরকার।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘গরমের তীব্রতা বাড়লে কিছু ব্যবসায়ী এ সুযোগ নেন। দাম বাড়ার খবরটি জেনেছি। আমরা আগামীকাল (সোমবার) থেকে কঠোর তদারকিতে যাব।’
চার্জার ফ্যানের সঙ্গে বিক্রি বেড়েছে এসি, আইপিএস ও চার্জেবল বাল্বের। এগুলোর মধ্যে বেশি চাহিদা এসির। দেড় টনের এসি ৭২-৭৪ হাজার টাকা, এক টনের এসি ৬৩-৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসি উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গরমের কারণে অন্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।

ইলেক্ট্রোমার্টের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার বলেন, গরমের কারণে এসি বিক্রি বেড়েছে। বিশেষ করে গ্রি ব্র্যান্ডের এসি গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত বেশ ভালো চলছে।

আরও পড়ুন

×