সোনালী বিডিবিএল এমওইউ বেঁকে বসেছে বেসিক রাকাব

.
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪ | ২৩:৩৬
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরোধিতার মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড-বিডিবিএল। গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে দুই ব্যাংক এ স্মারকে স্বাক্ষর করে। এদিকে একীভূতকরণ ইস্যুতে বেঁকে বসেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)।
গতকাল চুক্তিতে সই করেন সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম ও বিডিবিএলের এমডি হাবিবুর রহমান গাজী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাছের, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী, বিডিবিএলের চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
ব্যাংক খাতের দুরবস্থা কাটাতে অন্তত ১০টি দুর্বল ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দেন গভর্নর। এ জন্য গত ডিসেম্বরে একটি দ্রুত সংশোধনমূলক কার্যক্রম (পিসিএ) কাঠামো করা হয়। সেই অনুযায়ী আগামী বছরের মার্চ থেকে বাধ্যতামূলক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। তবে গত মার্চেই এ কার্যক্রম শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একের পর এক ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যানকে ডেকে একীভূত হওয়ার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা, সোনালীর সঙ্গে বিডিবিএল, কৃষির সঙ্গে রাকাব, সিটির সঙ্গে বেসিক এবং ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত হওয়ার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরিণতিতে দুর্বল ব্যাংক থেকে অনেকে আমানত তুলে নিতে শুরু করেন। এর মধ্যে গত মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, আপাতত পাঁচ ব্যাংকের বাইরে কোনো ব্যাংক একীভূত হবে না। তবে এই পাঁচ ব্যাংকের কেউ কেউ একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গত ২৭ এপ্রিল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে না। এ নিয়ে পরিচালকরা পদত্যাগের পর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর গত ২ মে রাকাব এবং ৭ মে বেসিক ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জোর করে স্বেচ্ছা একীভূত হওয়ার মৌখিক নির্দেশনার বিষয়টি তুলে ধরেছে। মালিক হিসেবে এ বিষয়ে সরকারের লিখিত মতামত চাওয়া হয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার খবর প্রকাশের পর সরকারি আমানত তুলে নেওয়ায় গভীর সংকটে পড়েছে ব্যাংকটি। চরম তারল্য সংকটের কারণে বন্ড রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেওয়ার সুযোগও শেষ হয়ে গেছে। গ্রাহকদের আস্থা সংকটের কারণে বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণে (এসএলআর) ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর আগে কখনও ব্যাংকটির এসএলআর ঘাটতি হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে যে কোনো মুহূর্তে ‘চেক ডিজঅনার’-এর আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় একীভূতকরণ বিষয়ে মালিক হিসেবে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার, আমানত উত্তোলন বন্ধে নির্দেশনা এবং কম সুদে সরকারি আমানত সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
গত ২৫ এপ্রিল রাকাবের পর্ষদ সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতে নয়, একীভূত হতে হলে মালিক হিসেবে সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের লিখিত সিদ্ধান্ত আসতে হবে। আর একীভূত হলে অন্য কোনো দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে নয়, কোনো একটি সবল ব্যাংকের সঙ্গে হোক।
গতকাল এমওইউ স্বাক্ষর শেষে বিডিবিএলের চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস সাংবাদিকদের বলেন, চারটি সূচকের ভিত্তিতে ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে। চার সূচকের মধ্যে তিনটিই ভালো আছে। শুধু খেলাপি ঋণ আদায়ে দুর্বলতা আছে। খেলাপি ঋণও কমিয়ে আনা হয়েছে। সময় পাওয়া গেলে এ সমস্যাও কাটিয়ে ওঠা যেত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে এখনই একীভূত হতে হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম সাংবাদিকদের বলেন, উভয় ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আবার বিডিবিএলের কর্মীদের চাকরি হারানোর কোনো শঙ্কা নেই। সোনালী ব্যাংক দেড় লাখ কোটি টাকা আমানতের ব্যাংক। বিডিবিএলের আমানত ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ফলে সোনালীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং বিডিবিএল আরও সবল হবে। একীভূত হওয়ায় ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে। অন্যান্য সূচকেও উন্নতি হবে। এমওইউ সইয়ের পর দ্রুত অডিট ফার্ম নিয়োগ দিয়ে একীভূতকরণের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
- বিষয় :
- ব্যাংক একীভূতকরণ