ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

প্রথমবারের মতো ট্রেজারি বিলের সুদ ১২ শতাংশে

প্রথমবারের মতো ট্রেজারি বিলের সুদ ১২ শতাংশে

প্রতীকী ছবি

ওবায়দুল্লাহ রনি 

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪ | ২৩:৫৬

সরকারের ঋণ নেওয়ার উপকরণ ট্রেজারি বিলের সুদহার প্রথমবারের মতো ১২ শতাংশে উঠেছে। এর আগে ট্রেজারি বিলে সর্বোচ্চ সুদের রেকর্ড ছিল ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। আইএমএফের শর্ত মেনে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়ানো ও বাজারে সুদহার বাজারভিত্তিক করার প্রভাবে সরকারের ঋণের সুদহার এভাবে বেড়েছে। 

ট্রেজারি বিলে প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিও বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ধরনের বিনিয়োগের মুনাফার বিপরীতে কোনো কর দিতে হয় না। আবার বিনিয়োগের নির্ধারিত কোনো সীমাও নেই। যে কারণে অনেকে এখন ব্যাংক বা সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা তুলে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে খাটাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বিপরীতে গত রোববার ৩ হাজার ১৯৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ নেয় সরকার। এর মধ্যে ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে ১১ দশমিক ৬০ থেকে ১২ শতাংশ সুদে ৭৪৩ কোটি টাকা নিয়েছে। ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ সুদে সরকার ঋণ নিয়েছে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর ১৮২ দিন মেয়াদি বিলে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ সুদে নিয়েছে ৪১৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, ট্রেজারি বন্ডে সুদ ১২ শতাংশের ওপরে আছে। বন্ড হলো দীর্ঘমেয়াদি উপকরণ। সরকারের ঋণের সুদহার বাড়লে আগামীতে বাজেটের ওপর সুদ পরিশোধের চাপ বাড়বে। বর্তমানে সুদ পরিশোধে পরিচালন বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয়। 

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত মেনে গত বুধবার সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আবার ডলারের দর ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা মধ্যবর্তী দর ঘোষণা করা হয়েছে। এমন এক সময়ে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যখন বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। নিট রিজার্ভ নেমেছে ১৩ বিলিয়ন ডলারে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ৪৫ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের শেষ দিনের তুলনায় অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ঋণ কমেছে ১৯ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা বেড়েছে। 
ব্যাংক থেকে ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতার এ সময়ে আমানত তেমন বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারিতে আমানতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে।

আবার ব্যাংক খাতের ১০ শতাংশের কম ঋণ খেলাপি দেখানো হলেও অনাদায়ী ঋণ ৩০ শতাংশের মতো। এসব ঋণের একটি অংশ বেনামি। এতে টাকার প্রবাহ কমেছে। কয়েক বছর ধরে এ সমস্যা চলতে থাকলেও এখন বড় আকারে দেখা দিয়েছে। আবার ডলার সংকট মেটাতে গিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে
১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো।

সব মিলিয়ে তারল্য সংকটে রয়েছে অনেক ব্যাংক। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে আশানুরূপ ধার না পেয়ে এখন নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিচ্ছে। 
সূত্র জানায়, সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ করতে পারছে না। আটটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের চলতি হিসাবে ঘাটতি নিয়ে চলছে। এসব ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। বেশির ভাগ ব্যাংকের উদ্বৃত্ত থাকলেও সামগ্রিক ঘাটতি ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো। সাধারণভাবে ব্যাংকগুলো সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদের (এসএলআর) অতিরিক্ত বিল ও বন্ড লিয়েন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে পারে। তবে কিছু ব্যাংকের কাছে ধার নেওয়ার মতো বিল ও বন্ড নেই। টাকা ফেরতের অনিশ্চয়তার কারণে এসব ব্যাংক আন্তঃব্যাংক থেকেও ধার পাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

×