ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় ঘুরেফিরে মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গ

মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে রাখতে চায় সরকার

ছবি-সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪ | ২০:০০ | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ | ২০:০৭

মাসের পর মাস ধরে চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। গত দুই বছর ধরে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। জীবনযাত্রার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেড়েছে খরচ। চড়া মূল্যস্ফীতিতে কষ্টে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তাই ঘুরে ফিরে বারবার এসেছে মূল্যস্ফীতির কথা। 

বৃহস্পতিবার নিজের প্রথম বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাজেটের অন্যতম অগ্রাধিকার। আগামী অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান দুই নীতি- মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির আওতায় যুগপৎ কার্যক্রমের মাধ্যমে এটি সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি। 

দেশে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি যে এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি সেটি অকপটেই স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমে আসার সাম্প্রতিক প্রবণতা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনও ৯ শতাংশের ওপরেই রয়েছে। 

মূল্যস্ফীতি কী কারণে বেশি- তার কিছু ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ইউএস ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ অবচিতি ঘটেছে। যার ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ছে। আর আমদানিজনিত মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির ওপর। 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী করা হচ্ছে সে প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে অন্যান্য দেশের নেওয়া পদক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সুদের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডি ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১০ শতাংশে ও নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৭ শতাংশে উন্নীত করে পুনর্নিধারণ করা হয়েছে। 

আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির আওতায় নেওয়া পদক্ষপেগুলোর সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য এর পাশাপাশি রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এসব নীতি কৌশলের ফলেই আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করছেন তিনি। 

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় কমানোর পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর ফলে আগামীতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। এতে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হবে। স্থিতিশীলতা আসবে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারেও। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির আওতায় যুগপৎভাবে নেওয়া কার্যক্রমকে সাফল্যমন্ডিত করতে সহায়ক হবে। 

বাজেট বক্তৃতার শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনি ইশতেহারের কথা স্মরণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, নির্বাচিন ইশতিহারে যে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, তার একটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। 

বক্তৃতার উপসংহারে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কৃচ্ছসাধন কর্মসূচি সীমিত পরিসরে চালু রাখা হলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ হতে নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষা প্রদান কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে। তিনি জানান, যেসব বিষয়ে প্রাধিকার দিয়ে এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে তার একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। 

প্রসঙ্গত, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতাতেও মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যের কথা জানানো হয়। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ নেই। তাই শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত মে মাস পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার অনেক বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা খুব কঠিন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  

আরও পড়ুন

×