ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে

প্রতীকী ছবি

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪ | ০৭:৪৩

ব্যাংক খাতের দুরবস্থার জন্য দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা অন্যতম কারণ। ঠিক সময়ে যথাযথ নীতি না নেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনেকে বলেছেন, ব্যাংক খাতের তদারকি কেমন হবে তা মূলত নির্ভর করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নানাভাবে তদারকি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আবার ব্যাংকের সংখ্যা বাড়লেও সে হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জনবল না বাড়িয়ে উল্টো সুযোগ-সুবিধা কমানো হচ্ছে। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা কমানোর প্রতিবাদে গত মে মাসে সভা ডাকলেও শেষ পর্যন্ত তা করতে পারেনি। ওই সময় গভর্নর কাউন্সিলের নেতাদের দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। তবে এখনও কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। আবার ব্যাংকের সংখ্যা বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পদসংখ্যা বাড়ানো হয়নি। এসব নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আবার বিভিন্ন দোহাই দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ব্যবস্থা দুর্বল করা হয়েছে। খুঁটিনাটি অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য ডেপুটি গভর্নর বা গভর্নরের কাছে যেতে হচ্ছে। আগে এসব বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে কিংবা সর্বোচ্চ নির্বাহী পরিচালক পর্যায় পর্যন্ত গেলে হতো। এখন ছোটখাটো পরিদর্শনের রিপোর্টও ডেপুটি গভর্নরকে দিতে হচ্ছে। এভাবে কাজের গতি কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা কী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, চাকরি বিধিতে তা ঠিক করা আছে। এর পরও অনেক সময় নিজ থেকে কেউ হয়তো ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে ফাইল পাঠিয়ে থাকেন। কাজের গতি কমাতে এমন করা হচ্ছে, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম তিনটি কাজ হলো- মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার ঠিক রাখা এবং ব্যাংক খাত তদারকি। টানা ২৩ মাস ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। মূল্যস্ফীতির জন্য ঘুরেফিরে সামনে আসছে কৃত্রিমভাবে ডলারের দর এবং সুদহার ধরে রাখার বিষয়টি। আমদানিকারকদের সুবিধা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে রাখে। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের দর ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায় আটকে রাখা হয়। তবে করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কৃত্রিম ব্যবস্থা ধরে রাখা যায়নি। ৮৪ টাকার ডলার ১১৮ টাকায় উঠেছে এবং দেশি-বিদেশি সুদহার অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি আর নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

২০২২ সালের জুলাই মাসে বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যোগদানের পর সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন, বিশ্বের সব দেশ সুদহার বাড়ালেও বাংলাদেশে সীমা প্রত্যাহার করা হবে না। 'আউট অব বক্স' সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। আর ডলার বাজার নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে ঠিক হয়ে আসবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম মেনেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ অনেক দেরিতে নেওয়া হয়েছে। অনেক আগেই ডলারের দর বাজারভিত্তিক করা দরকার ছিল। সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। দেরিতে হলেও যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে সরে আসা যাবে না। এ ছাড়া টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক বাঁচিয়ে রাখার অবস্থান থেকেও সরে আসতে হবে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, সুদহার বাজারভিত্তিক করা ও ডলারের দর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অনেক দেরিতে। সাধারণভাবে সুদহার বাড়ানো হয় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে এমন পর্যায়ে নেমেছে, এখন আর ডলারের দর বা সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে না।

আরও পড়ুন

×