ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট অপরিহার্য: ফুডপান্ডা এমডি

ফুডপান্ডার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আম্বারীন রেজা। ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ২২:০৮
আধুনিক ব্যবসার জন্য নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন অনলাইনভিত্তিক খাবার ডেলিভারি সংস্থা ফুডপান্ডার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আম্বারীন রেজা।
তিনি বলেন, আধুনিক ব্যবসার জন্য নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। ইন্টারনেট সরবরাহে যেকোনো ব্যাঘাত ব্যবসায় প্রভাব ফেলতে পারে। এটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত ও লেনদেন বিলম্বিত করতে পারে; যা শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভর করে, ফলে তাদের জন্য নির্বিঘ্ন ইন্টারনেট সুবিধা অপরিহার্য।
সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সহ-সভাপতি।
তিনি বলেন, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। ফলে বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উন্নত ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতের মাধ্যমে বিভিন্ন স্টার্টআপ ও এসএমই ব্যবসায় বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের সুযোগ এসেছে।
হত জুলাইয়ে ইন্টারনেট বন্ধের কারণে খাতটি থেকে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা হারিয়েছে উল্লেখ করে আম্বারীন বলেন, এই সংকটের ফলে ৪ লাখেরও বেশি ডিজিটাল উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারি আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন।
টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সাম্প্রতিক বিবৃতির প্রশংসা করেন ই-ক্যাব সহ-সভাপতি। নাহিদ ইসলাম সেখানে বলেন, ইন্টারনেট একটি মৌলিক অধিকার এবং ইন্টারনেট পরিষেবাগুলোকে ব্যাহত বা বন্ধ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
নাহিদ ইসলামের ওই বিবৃতিকে অত্যন্ত সাহসী উচ্চারণ উল্লেখ করে ফুডপান্ডার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা তার এই দৃষ্টিভঙ্গিকে পূর্ণ সমর্থন করি এবং বিশ্বাস করি- ইন্টারনেটকে একটি ‘পাবলিক ইউটিলিটি’ পরিষেবা হিসাবে ঘোষণা করা উচিত। এছাড়া এটিকে আরও সাশ্রয়ী এবং সকলে যাতে ব্যবহার করতে পারে সেই উপযোগী করে তোলা উচিত।
বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতকে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করেছেন আম্বরিন রেজা। যার মধ্যে রয়েছে- স্মার্টফোন ক্রয়ে ভর্তুকি দেওয়া, ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রচার চালানো, ডিজিটাল পেমেন্টের জন্য ভর্তুকি দেওয়া, অনলাইন বিক্রয়ের উপর ভ্যাট মওকুফ করা এবং স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র ডিজিটাল ব্যবসাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া।
তিনি জানান, স্বল্প আয়ের মানুষদের স্মার্টফোন কেনার জন্য ভর্তুকি দেওয়া ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির ডিজিটালাইজেশনেও স্মার্টফোন অন্যতম মূল উপাদান জানিয়ে তিনি স্মার্টফোন আমদানি এবং স্থানীয় উৎপাদনে শুল্ক কমানোর পরামর্শ দেন।
ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের পরিধি বাড়াতে গ্রাহক ও ব্যবসায়ী উভয়কে ভর্তুকি দেওয়া উচিত বলে মত দেন আম্বারীন রেজা। বলেন, আমাদের পেমেন্ট সিস্টেম এখনো নগদ অর্থের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু আমরা যদি ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে আরও বেশি মানুষকে আনতে পারি, তাহলে এটি আরও স্বচ্ছ হয়ে উঠবে।
অনলাইননির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসা ও রেস্তোরাঁগুলো ই-কমার্স ইকোসিস্টেমের মেরুদণ্ড বলে দাবি করেন ফুডপান্ডার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই ধরনের ব্যবসাগুলোকে সুদমুক্ত, বিনা জামানতে ঋণ প্রদানের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
বাংলাদেশে স্টার্টআপের পরিধি বাড়াতে ফুডপান্ডা মতো সফল বৈশ্বিক স্টার্টআপ মেন্টরশিপ প্রদানে আগ্রহী বলে জানান আম্বারীন রেজা। তিনি বলেন, স্টার্টআপ সংস্কৃতিকে সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী করার জন্য, ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করা, স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্তির নীতি সহজ করা এবং ট্যাক্স ইনসেনটিভ প্রদানের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আম্বারীন জোর দিয়ে বলেন, সরকারি সহায়তা রাজনৈতিক বিবেচনায় হওয়া উচিৎ নয়। যদি আমরা সত্যিই পরিবর্তন আনতে চাই- তবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি ও সফ্টওয়্যার খাতের জন্য শুল্ক ছাড় বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি ডিজিটাল কমার্স অথরিটি অ্যাক্ট ২০২৩ এবং ডেটা সুরক্ষা আইন ২০২৩ নতুন করে পর্যালোচনা করা উচিত বলে জানান তিনি।
- বিষয় :
- ফুডপান্ডা
- ফুডপ্যান্ডা
- ই-কমার্স