সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২০ হাজার কোটি টাকা

ওবায়দুল্লাহ রনি
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ০৮ জুন ২০২০ | ০২:২৭
ক্রয়সীমা কমানোসহ নানা কড়াকড়ির ফলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ব্যাপকভাবে। এর মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২৭ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে সেভাবে বিক্রি না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। রাজস্ব আদায়ে খারাপ অবস্থার কারণে এখন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাচ্ছে সরকার।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ৭ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে ৩০ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল। সব মিলিয়ে সঞ্চয়পত্রে জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। বিপুল অঙ্কের এই ঋণের বিপরীতে সরকারকে ১১ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রে বিপুল অঙ্কের এ দায়ের বিপরীতে চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে সরকারকে ৬৯ লাখ টাকার সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হবে। সুদ ব্যয় কমাতে গিয়ে সরকার সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের একক সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এছাড়া এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক, সঞ্চয়পত্রের সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে করাসহ নানা বিধান করা হয়েছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সঞ্চয়পত্রে ২০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা খুব বেশি নয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা অর্জিত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যে প্রচুর ঋণ নেওয়া হচ্ছে, তা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। এমনিতেই অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে আছে, ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে এবং খেলাপি ঋণ ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ আরও কমে যাবে। তখন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়ে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সবই বাধাগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ৬ থেকে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে। আর সঞ্চয়পত্রে সুদ গুনতে হয় ১১ শতাংশের বেশি। এছাড়া আগে সঞ্চয়পত্রে কালো টাকা বিনিয়োগ করলেও ধরার উপায় ছিল না। এ কারণে সঞ্চয়পত্রে নানা কড়াকড়ি করে সরকার। শর্ত শিথিল না করলে ২০ হাজার কোটি টাকার নিট বিক্রি হবে না।
পেনশনার, পরিবার, তিন মাস অন্তর মুনাফা ও পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র- বিদ্যমান এই চার ধরনের সঞ্চয়পত্রে আগে আলাদা আলাদা সীমা নির্ধারিত ছিল। প্রতি ক্ষেত্রে গ্রাহক ঊর্ধ্বসীমা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনতে পারতেন। তাতে একক নামে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৫৫ লাখ এবং যৌথ নামে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল। তবে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্র মিলে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে এক কোটি টাকা সীমা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় গত ১ জুলাই থেকে সারাদেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা যেখান থেকেই কিনুক সব তথ্য নির্দিষ্ট ডাটাবেজে জমা হওয়ায় এখন আর কেউ সীমার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না।
সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে যাওয়া এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ে খুব খারাপ অবস্থার কারণে অভ্যন্তরীণ উৎসে এখন ব্যাংক খাতের ওপর সরকারের ঋণ নির্ভরতা ব্যাপক বেড়েছে। মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে চলতি অর্থবছরের পুরো সময়ে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৭২ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। গত ৩১ মে পর্যন্ত সরকার নিট ৬৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা নিয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় যা ৩৭ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। এর বাইরে বিদেশি উৎস থেকে প্রচুর ঋণ নিচ্ছে সরকার। যে কারণে সংকটের মধ্যেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। তবে বিক্রি ব্যাপক বাড়তে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত বিক্রি গিয়ে ঠেকে ৪৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকায়। এর আগের কয়েকটি অর্থবছরের চিত্র এরকমই ছিল।