ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে বিডা: আশিক চৌধুরী

সভায় ১৭ রাজনৈতিক দল, অংশ নেয়নি বিএনপি

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে বিডা: আশিক চৌধুরী

দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ শুনতে মতবিনিময় সভা করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। ছবি: প্রেস উইং

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫ | ২৩:১৩ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৫ | ০৬:০৭

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো দলীয় রাজনীতির বাইরে রেখে জাতীয় স্বার্থের আলোকে এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডা সদরদপ্তরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই বার্তা দেন সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। 

অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বিডার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, দেশের স্বার্থ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং শ্রমিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিনিয়োগের বিষয়টি ভাবতে হবে। এ ছাড়া দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, অবকাঠামো উন্নয়ন, আইনি জটিলতা দূর করার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন তারা। 

বিডার সঙ্গে মঙ্গলবার আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দল হলো– বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (এনজেপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। তবে সভায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) অংশ নেয়নি। 

এ প্রসঙ্গে বিএনপি বলেছে, বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে বর্তমানে যা চলছে, সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। তাদের উচিত নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। 

বিডা দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, চলমান ও প্রস্তাবিত সংস্কার কার্যক্রম এবং নীতির ধারাবাহিকতা বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ আহ্বান করেছে। 

চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান জাতীয় স্বার্থের বিষয়। দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা সংকট রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে এখন কী করছি এবং আগামী ছয় থেকে আট মাসে কী করব, তা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করতে চাই। 

তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বমানের বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে এর আগে জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় স্বার্থের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে কোনো আপস চলবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

বিনিয়োগ পরিবেশের চিহ্নিত সমস্যা 

সভায় বিডার ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নহিয়ান রহমান রোচি সংস্থার সাম্প্রতিক কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি জানান, দেশের ২০০ জনেরও বেশি স্থানীয় বিনিয়োগকারী ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পাঁচটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো– সরকারি সেবার মান খারাপ, নীতির ধারাবাহিকতা নেই, শিল্প খাতের সঙ্গে পরামর্শের অভাব, দুর্নীতি, সম্পদ ও সুযোগের প্রবেশাধিকার সীমিত। বিডা ইতোমধ্যেই এসব সমস্যা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। 

রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শ

বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা বিডার এমন আলোচনার উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং সংস্কার পরিকল্পনায় পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। তারা বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশি উদ্যোক্তাদের জন্যও নীতিগত সহায়তা ও সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশি উদ্যোক্তাদের জন্যও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।

প্রতিনিধিরা দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, আইনি জটিলতা নিরসন, শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা ও পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়ার সুপারিশ করেন।

তারা বলেন, বিনিয়োগ নীতির ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেতে হবে। 
সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা ও অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ এমন একটি বিষয়, যা এক বছরের সংস্কারে নির্ভর করে না। রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন এলেও বিনিয়োগ পরিবেশে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়ে। 

এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রস্তাব করেন, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি ‘ফিন্যান্সিয়ালের চার্টার’ প্রণয়ন করা যেতে পারে, যাতে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
 
সভা শেষে বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ ধরনের গঠনমূলক আলোচনা চলমান থাকবে এবং ভবিষ্যৎ প্রেজেন্টেশনে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আপনাদের মতামত আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে আরও বাস্তবমুখী করতে সাহায্য করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

আরও পড়ুন

×