ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বাজেট ২০২৫-২৬

বাতিল হতে পারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

বাতিল হতে পারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

.

 মেসবাহুল হক 

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫ | ০১:০৯ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ | ১৯:১৭

অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনা এবং ভবন নির্মাণে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল হতে পারে। গত ২ জুন ঘোষিত ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে আগের চেয়ে বাড়তি কর দিয়ে এসব ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়। তবে এ প্রস্তাব থেকে সরে আসতে পারে সরকার। এ সুবিধা অনৈতিক ও অন্যায্য উল্লেখ করে অনুমোদিত বাজেটে তা বাতিল করার সুপারিশ করেছে টিআইবি, সিপিডিসহ বিভিন্ন সংস্থা। 

সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার সকালে অর্থ সচিবসহ অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। দুপুরে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা অব্যাহত রাখা এবং ফ্ল্যাট নিবন্ধন ব্যয় কমানোসহ কিছু দাবিতে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের একটি প্রতিনিধি দল। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের উপস্থিতিতে রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুর রাজ্জাকসহ কার্যনির্বাহী কমিটির ৯ জন সদস্য এতে অংশ নেন। বৈঠকে কিছু যৌক্তিক দাবি পুরণের আশ্বাস দেওয়া হলেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। আগামী ২২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করবে উপদেষ্টা পরিষদ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান সমকালকে বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ বাতিলের বিষয়ে সক্রিয় বিবেচনা করছে সরকার। অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে এ সুযোগ অব্যাহত রাখার বিষয়ে জোর দাবি জানানো হয়েছে। সরকার সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

বৈঠকে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মন্দা অবস্থায় রয়েছে আবাসন খাত। তাই এ খাতে সহজ শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা উচিত। অনিচ্ছাকৃতভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ না থাকলে অতীতের মতো দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, জরিমানা দিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে অপ্রদর্শিত করার সুযোগ আয়কর আইনে রয়েছে।  আইনের ১৯ এর বি ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় তার সম্পত্তি উল্লেখ না করলে শর্তসাপেক্ষে পরবর্তী করবর্ষে তা দেখানোর সুযোগ রয়েছে। 

রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া সমকালকে বলেন, সার্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবাসন খাত টিকিয়ে রাখতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে তারা ফ্ল্যাটের প্রথম ক্রেতার ক্ষেত্রে সর্বমোট নিবন্ধন ব্যয় কমিয়ে ৭ শতাংশের পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে মূলধনী মুনাফার ওপর কর ৪ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া জমির মৌজা মূল্য বহাল রাখা, রড, সিমেন্টের কাঁচামাল, রং প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন নির্মাণ উপকরণের ওপর অতিরিক্ত কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। 

বর্তমানে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকাসহ ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে ২০০ বর্গমিটারের বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ে মূল্য যা-ই হোক, কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৬ হাজার টাকা নির্ধারিত কর দিতে হয়। আর ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট হলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য কর ৪ হাজার টাকা। রাজধানীর অন্যান্য এলাকা যেমন মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় অপ্রদর্শিত অর্থের ক্ষেত্রে ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাটের কর প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার টাকা ও এর চেয়ে বড় ফ্ল্যাটের কর ৩ হাজার ৫০০ টাকা।  

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে অর্থ অধ্যাদেশে এসব এলাকার কর প্রায় পাঁচগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া দুটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। যদি আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীনে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম হতে উদ্ভূত হয় এবং কোনো বৈধ উৎস হতে উদ্ভূত না হয়, তাহলে  আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার আওতায় কালো টাকা সাদা করা যাবে না। 

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংবাদ সম্মেলনর গত ৩ জুন গবেষণা সংস্থা সিপিডির  নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ফ্ল্যাট কেনায় কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ অব্যাহত রাখায় সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত করবে। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ সুবিধা বাতিলের সুপারিশ করে সিপিডি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ  রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্র সংস্কার—বিশেষ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে রীতিমতো উপেক্ষা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

আরও পড়ুন

×