ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহার

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহার

সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫ | ১৬:৩৮ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ | ২১:২৯

প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, সমালোচনার মুখে তা বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে সামাজির সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ শুল্ক-করে কিছু পরিবর্তন এনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেট অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। 

রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। গত ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট এবং ভবন কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছিল। তবে আগের চেয়ে করের পরিমাণ বাড়ানো হয়। তবে এ নিয়ে সমালোচনার পরিপেক্ষিতে তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এলো।

অনুমোদিত বাজেট নিয়ে রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান  উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।  

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘এখন প্রশ্ন আসতে আসতে পারে, যারা আগে টাকা দেখায়নি (অপদর্শিত অর্থ রয়েছে), তাদের এখন কী হবে? তাদের জন্য যেটা আছে, সেটা হচ্ছে তারা রেগুলার ট্যাক্স দেবে। মার্জিনাল ট্যাক্স ৩০ শতাংশ প্লাস ১০ শতাংশ অতিরিক্ত দেবে। এটা কালো টাকা বলে আমরা মনে করি না। ফলে কেউ কিন্তু এটা নিয়ে আপত্তিও করে নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভবন বা ফ্ল্যাটে স্কয়ার ফুট অনুযায়ী কর দিয়ে যারা কালো টাকা সাদা করত, রেগুলার ট্যাক্সের থেকে অনেক কম ট্যাক্স দিয়ে তারা পার পেত। সেটা আমরা পাঁচ গুণের মত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তারপরেও যেহেতু একটা বড় দাবি এসেছিল, এবার আমরা এটা বিলোপ করে দিয়েছি।’ 

বাজেটের চমক কী এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'চমক দেওয়ার জন্য আমরা আসিনি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য খাদের কিনার থেকে অর্থনীতিকে তুলে নিয়ে আসা। এমন পরিস্থিতিতে চমক দেওয়ার মত কিছু করার নেই। সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার করেই বাজেট দেওয়া হয়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদিত বাজেটটি যথাযথ ও সময়োপযোগী। 

সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ল
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকার পরিবর্তে এবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় বরাদ্দ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। অবসরভাতা ও সঞ্চয়পত্রের সুদ এতে অন্তর্ভুক্ত নেই। তবে এতে সামাজিক সুরক্ষা খাতে এই বাড়তি ব্যয়ের জন্য বাজেটের মোট আকারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। অর্থাৎ ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যয়ের বাজেট অপরিবর্তিই থাকছে। 

শুল্ক-করে যেসব পরিবর্তন
অর্থ মন্ত্রণালয় শুল্ক-করের পরিবর্তন নিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়, পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের অন্যূন ১০ শতাংশ শেয়ার আইপিও বা সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আয়ের সাড়ে ২২ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব ধরনের আয় ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে করহার ২০ শতাংশ হবে। অন্য সব পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সাড়ে ২৭ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব আয় ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে করহার ২৫ শতাংশ।

এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের করহার ১৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ হবে। সম্পত্তি হস্তান্তর হতে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর কর্তনের হার ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশের স্থলে কমিয়ে যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ২ শতাংশ করা হয়েছে।

রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর সাড়ে ৭ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝুট থেকে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তুলার উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিচালিত বিউটি পারলারের স্থান ও স্থাপনাভাড়ার ওপর মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। বলপয়েন্ট কলমের আমদানি পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা। হার্টের রিং ও চোখের লেন্স আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে ক্রুড পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৩ শতাংশ  করা হয়েছে। সৌরশক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। 

এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর রপ্তানি প্রণোদনা ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের যে পরিকল্পনা ছিল সরকারের, তার তৃতীয় ধাপ বাস্তবায়নের সময় পিছিয়ে ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন

×