ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ

তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২২ | ০০:৪৬

সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ করোনার ক্ষতি কাটিয়ে অথনৈতিক পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রেখেছে। তবে নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে সংগঠিত ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালীরা অগ্রাধিকার পেয়েছেন। সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যেও যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তারা আগে পেয়েছেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আর ক্ষুদ্র খাতের অনেকে প্রণোদনা প্যাকেজ বিষয়ে জানেনই না। রয়েছে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি। সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।

গতকাল শনিবার 'কভিড-১৯ প্রণোদনা প্যাকেজ : প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা' শীর্ষক ওয়েবিনারে এমন মতামত ওঠে আসে। এশিয়া ফাউন্ডেশন, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও গবেষণা সংস্থা র‌্যাপিড যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২৫ মার্চ প্রথমে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর একে একে ২৮টি প্যাকেজের আওতায় মোট এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করা হয়। দেশের মোট জিডিপির যা প্রায় ৬ শতাংশ। এসব প্যাকেজের ৮৫ শতাংশের বেশি ঋণনির্ভর। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে যা বাস্তবায়ন হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সমাজের সর্বত্র মান উন্নয়নের দরকার আছে। এ জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তবে যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনার ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সরকার সেটাই করেছে। সেখানে কিছু অসংগতি ছিল। যদিও সবাই একমত যে, প্রণোদনা প্যাকেজ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। সুবিধা কারা পাবেন, তা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে প্রথম দিকে কিছু ভুলভ্রান্তি হতে পারে। পরে তা ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে। আবার যে তথ্য পাওয়া যায়, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন করেন। সবার জন্য তথ্য অবারিত করার কাজ করা হচ্ছে।

মূল প্রবন্ধে র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। তবে সরকারের নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছেন সংগঠিত ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালীরা। বিশেষ করে রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা। তুলনামূলকভাবে ছোট উদ্যোক্তারা প্রণোদনার সুবিধা কম পেয়েছেন। অনেকে এ বিষয়ে জানেনই না। এ ছাড়া ঋণ আকারে দেওয়া অর্থকে প্রণোদনা বলা হবে কিনা, এটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আবার প্রণোদনা কাদের আগে দরকার, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে সেটা চিহ্নিত করা যায়নি। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে গেলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে না। নীতি সুবিধা বণ্টনে বৈষম্য দূর করতে হলে যার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তার কাছে সুবিধা আগে পৌঁছাতে হবে। তিনি বলেন, করোনাকালে বিশ্বের যে কয়েকটি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ছিল তার অন্যতম বাংলাদেশ। গত ডিসেম্বরে ৫৩টি দেশের মধ্যে ২২তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। তবে নানা ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি আছে। অনুমাননির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন না করে প্রমাণনির্ভর নীতি সক্ষমতার দিকে যেতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. কাওসার আহমেদ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ হওয়া প্রণোদনার টাকায় আগের ঋণ পরিশোধসহ বিভিন্ন অপব্যবহারের তথ্য এসেছে। যে কারণে যাচাই-বাছাই করে ভর্তুকির টাকা দিতে কিছুটা সময় লাগছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো হচ্ছে। যারা একটা সুবিধা পাচ্ছেন, আরেকটায় যেন অন্তর্ভুক্ত না হয় সেটা দেখা হচ্ছে।

ইস্টার্ন ব্যাংকের ডিএমডি খোরশেদ আলম সিএমএসএমই খাতের প্রণোদনা বাস্তবায়নে ধীরগতির বিষয়ে বলেন, ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও খোলেনি। ফলে তারা টাকা নিয়ে করবে কী।

ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মীদের মোটিভেশন দিতে হবে। এ ছাড়া প্রণোদনার ক্ষেত্রে শুধু আর্থিক খাতে নজর না দিয়ে শিক্ষাসহ অন্যান্য যেখানে প্রয়োজন দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম নূরুল আলম বলেন, প্রণোদনার ঋণ কাদের, কীভাবে দিতে হবে তা নির্ধারিত ছিল। ফলে এখানে রাজনৈতিক প্রভাবের সুযোগ ছিল না।

অগ্রণী ব্যাংকের সিএফও মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রণোদনার ঋণের পুরো ঝুঁকি ব্যাংকের ওপর। যে কারণে বিতরণের সময় ব্যাংক দেখেশুনে ঋণ দেবে এটাই স্বাভাবিক।

স্বাগত বক্তব্য দেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ। ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

আরও পড়ুন

×