ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

জমার ভিত্তিতে ঠিক হবে অবসর সুবিধা

জমার ভিত্তিতে ঠিক হবে অবসর সুবিধা

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৩:০৮

দেশের সব মানুষের অবসর জীবন সুন্দর ও নিরাপদ করার জন্য সরকার সর্বজনীন পেনশন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এই সুরক্ষা ব্যবস্থায় সব শ্রেণিপেশার মানুষ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দিয়ে এ ব্যবস্থা থেকে অবসর জীবনে অর্থাৎ ৬০ বছর পূর্তির পর থেকে মাসিক ভিত্তিতে সুবিধা পাবেন। প্রত্যেকের নিজস্ব জমার বিপরীতে ঠিক হবে অবসর সুবিধা।

জানা গেছে, আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় ১৮ বছর বয়সী কেউ প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে পেনশন তহবিলে জমা দিলে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তার জমার মোট পরিমাণ হবে ৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। ৪২ বছর ধরে এই পরিমাণ টাকা জমা দিলে বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর আমৃত্যু প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা করে পেনশন পাবেন তিনি।

যিনি ১০ বা পাঁচ বা দুই বছর ধরে বা অন্য যে কোনো মেয়াদে পেনশন তহবিলে টাকা জমা দেবেন, তার মোট জমা হিসাব করে ৬০ বছর বয়স পূর্তির পরের সুবিধা নির্ধারিত হবে। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে একজন ব্যক্তির সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদার হার ১০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সীমা এখনও ঠিক হয়নি। কর্মকর্তারা জানান, ১৮-৬০ বছর বয়সী যে কেউ নিজের ভোটার আইডি নম্বর ব্যবহার করে পেনশন অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থী, গৃহিণীদের পেনশনের চাঁদা দেওয়ার সক্ষমতা থাকলে তারাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।

গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বিষয়ে একটি কৌশলপত্র উপস্থাপন করেছেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার আলোকে প্রণীত কৌশলপত্রটির ওপর প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সর্বজনীন পেনশন আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই আইন প্রণয়নের কাজ শেষ হবে। আইনটি চূড়ান্ত করার আগে সর্বসাধারণের মতামত নেবে সরকার। আইনের আওতায় কর্তৃপক্ষ গঠন করে আগামী অর্থবছর থেকেই এ পেনশন ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।

সরকারি চাকরিজীবী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তারা আপাতত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বাইরে থাকবেন। আর এ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মী বা সচ্ছল নাগরিকদের জন্য সরকারের কোষাগার থেকে কোনো অর্থ দেওয়া হবে না। আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের পেনশনের চাঁদার একটি অংশ প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হতে পারে। দরিদ্র ও কম আয়ের নাগরিকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাড়তি অর্থ দেওয়া হবে।
এই তহবিলে জমা হওয়া অর্থ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারের লাভজনক অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা হবে। এতে ১০ শতাংশ হারে পেনশন তহবিলে সুদ পরিশোধ করবে সরকার। শুরুতে সব খাত বা ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে না। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে যোগ্য সব মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক থেকে কারিগরি সহায়তা নেওয়া হবে। পেনশনভোগীদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে এবং ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা রাখা হতে পারে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, দেশে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। অনানুষ্ঠানিক ও বেসরকারি খাতের কর্মীদের অবসরে নিজস্ব সঞ্চয় ছাড়া কোনো সহায় থাকছে না। অনেকের সঞ্চয় কিছু থাকেও না। ফলে শেষ জীবনে অনেকেই অর্থকষ্টে পড়ে প্রয়োজনীয় খাওয়া, পরা, চিকিৎসা পান না। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মাথাপিছু আয় বাড়ছে। এ অবস্থায় নাগরিক জীবনে খাওয়া, পরা, চিকিৎসার কষ্ট রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ জন্য সরকার দ্রুত এই পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে চায়।

বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমশক্তি রয়েছে পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী পাঁচ শতাংশ। বেসরকারি খাতে নিয়োজিত ১০ শতাংশ। এই ১৫ শতাংশ মিলে প্রাতিষ্ঠানিক খাত। শ্রম শক্তির বাকি ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের, যাদের কোনো নিয়োগপত্র নেই। কোনো পেনশন ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে ১১ লাখ সরকারি চাকরিজীবী মাসিক পেনশন পান। সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন করপোরেশনের কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করে গণকর্মচারী (অবসর) আইন প্রণয়ন করা হয় ১৯৭৪ সালে। এর মাধ্যমে গণকর্মচারীদের চাকরিজীবনের সর্বশেষ উত্তোলনকৃত বেতনের একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণ (সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ) পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হলে এখানেও পরিবর্তন আনা হবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এ উদ্যোগকে যুগান্তকারী ও মহৎ উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। দেশের অর্থনীতিবিদদের এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগ। এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে দেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি ঘটবে।

আরও পড়ুন

×