সাক্ষাৎকার
অল্প সময়ে ক্রেতার ভালোবাসা পেয়েছে 'লাভেলো'

জাকারিয়া হোসেন, কোম্পানি সচিব, লাভেলো আইসক্রিম
জসিম উদ্দিন বাদল
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২২ | ২৩:৩২
সমকাল :বড় কয়েকটি কোম্পানি বাজারে আসার পর আপনারা ব্যবসা শুরু করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে ভালো অবস্থানে যেতে সক্ষম হয়েছেন। এর কারণ কী হতে পারে?
জাকারিয়া হোসেন :আইসক্রিম ভালোবাসে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে লাভেলো আইসক্রিমের নামকরণ করা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে লাভেলো যাত্রা শুরু করে। এর লোগোতেও রাখা হয়েছে ভালোবাসার প্রতীক। শুরুর দিকে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল, বিশেষত বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভোক্তার ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে লাভেলো। নিজেদের ওপর আস্থা, পণ্যের মান এবং ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে যা সম্ভব হয়েছে।
সমকাল :আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে দেশে আইসক্রিমের বাজার সম্পর্কে কিছু বলুন?
জাকারিয়া হোসেন :দিন দিন আইসক্রিমের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বড় হচ্ছে এর বাজার। বাড়ছে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের পরিধি। এ খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়ছে সরকারের। আইসক্রিমকে কেন্দ্র করে ফ্রিজের ব্যবসাও বাড়ছে। প্লাস্টিক ও চিনিশিল্পের প্রসারেও আইসক্রিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে আইসক্রিম খাত।
সমকাল :করোনা সংক্রমণের কারণে আইসক্রিমের বাজারে কোন ধরনের প্রভাবে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতি কেমন?
জাকারিয়া হোসেন :করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে লাভেলোর বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। তবে গ্রামাঞ্চলে মানুষ করোনাকে বেশি ভয় করেনি। লাভেলোর গ্রাহক গ্রামে বেশি। ফলে লাভেলোর বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমেনি। করোনার মধ্যেও মূল বেতনের ২৫ শতাংশ করোনা ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়েছে কর্মীদের।
সমকাল :সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এ খাত উপকৃত হয়েছে?
জাকারিয়া হোসেন :এ খাতের ব্যবসায়ীদের কোনো সংগঠন নেই। ফলে দাবি-দাওয়া থাকলেও তা আদায় করা সম্ভব হয় না। এ কারণে প্রণোদনার ঋণের বিষয়েও সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করা সম্ভব হয়নি। তবে উদীয়মান এ শিল্পের দ্রুত বিকাশে সরকারের আর্থিক ও নীতি সহায়তা দরকার।
সমকাল :বর্তমান বাজারে লাভেলোর মোট শেয়ার কত শতাংশ, বছরে কতটুকু বাড়ছে?
জাকারিয়া হোসেন :এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে বাজারে এখন লাভেলোর মার্কেট শেয়ার তৃতীয় অবস্থানে। আমাদের ধারণা, লাভেলোর মার্কেট শেয়ার ১৫ থেকে ১৬ শতাংশের বেশি হবে। প্রতি বছরই মার্কেট শেয়ার বাড়ছে। আমাদের ভিন্নতা হলো পণ্যের গুণগত মানে। মানের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। ডিস্ট্রিবিউটর ও স্টলের কর্মী হিসাব করলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ জড়িত রয়েছে লাভেলোতে।
সমকাল :আইসক্রিম উৎপাদনে কাঁচামাল কোথা থেকে আমদানি করা হয়। আমদানিতে কোনো প্রতিবন্ধক রয়েছে কিনা?
জাকারিয়া হোসেন :বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ইতালিসহ কয়েকটি দেশ থেকে আইসক্রিমের চকলেট আমদানি করা হয়। তুরস্ক ও চীন থেকে আমদানি করা হয় প্যাকেজিং পণ্য। ফ্রান্স থেকে ফ্লেভার এবং দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য আমদানি করা হয় নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। এ শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা আমদানি শুল্ক্ক। আইসক্রিম তৈরির সিংহভাগ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। কাঁচামাল আমদানিতে সর্বনিম্ন ৩৭ থেকে সর্বোচ্চ ১২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক্ক রয়েছে। আইসক্রিম সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ফ্রিজ আমদানিতেও ১০৪ শতাংশ শুল্ক্ক দিতে হয়। আমদানি শুল্ক্ক কমালে এ শিল্পের বিকাশ দ্রুত ঘটবে।
সমকাল :আর কী কী সমস্যা রয়েছে?
জাকারিয়া হোসেন :আইসক্রিম নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিবহন আটকে থাকায় আইসক্রিম গলে যায়। এতে অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়। এ ছাড়া বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোসহ এ খাতে সরকারের নীতি সহায়তা জরুরি।
সমকাল : বাংলাদেশে আইসক্রিম খাতের সম্ভাবনা কেমন?
জাকারিয়া হোসেন :এ খাতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। গরমের স্থায়িত্ব বাড়ছে। মানুষের রুচিতে পরিবর্তন আসছে। আইসক্রিমের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। এতে বাজারের পরিধি বড় হচ্ছে।
সমকাল :আপনাদের ব্যবসা শুরুর গল্প ও নতুন পরিকল্পনা জানতে চাই?
জাকারিয়া হোসেন :সবাই যখন ব্যবসার শুরুতে রাজধানীকেন্দ্রিক হয়, সে সময় লাভেলো ঢাকার বাইরের বাজার ধরতে চেয়েছে। লাভেলোর সামনে উদাহরণ ছিল আঞ্চলিক কয়েকটি ব্র্যান্ড। যেমন, চট্টগ্রামের পান্ডা, মাগুরার পিপাসা আইসক্রিম ও খুলনার মিল্ক্কি। এসব আইসক্রিম আঞ্চলিকভাবে খুবই বিখ্যাত। ঢাকার বাইরে লাভেলো কর্তৃপক্ষ সেই বিখ্যাত জায়গাগুলোকে বেছে নিয়েছে। এতে ভালো সাফল্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, সেন্টমার্টিনসহ বহু অঞ্চলে লাভেলোর আইসক্রিমের বাজার রয়েছে। সম্প্রতি ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ছয়টি নতুন পণ্য বাজারে এনেছি আমরা। ভবিষ্যতে ভোক্তার রুচি ও চাহিদা পূরণে সময়োপযোগী পণ্য বাজারে আনতে আমাদের চেষ্টা থাকবে।
গত বছর লাভেলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ১১ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। ভবিষ্যতে যেন আরও ভালো মুনাফা অর্জন করা যায় সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছে লাভেলো।
- বিষয় :
- লাভেলো আইসক্রিম
- আইসক্রিম
- আইসক্রিম রপ্তানি