ক্ষমতার দাপটের ভয়ংকর প্রদর্শনী

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০
খুনের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অপরাধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তিন নেতাকর্মীকে সংগঠন হইতে বহিষ্কার নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
সোমবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বচসার জেরে ছাত্রলীগের উক্ত নেতাকর্মীর মারধরের শিকার হইয়া আবুল হাসান নামে এক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। ঐ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তদন্তপূর্বক শাহবাগ থানা পুলিশ তিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা পায় এবং গত বুধবার অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করে। উপরন্তু গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ অপর দুই অভিযুক্তকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাইতেছে। ইহারই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ রবিবার আলোচিত তিন অভিযুক্তকে সংগঠন হইতে বহিষ্কার করে।
তবে এই ঘটনায় পুনরায় প্রমাণিত– ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর ক্ষমতার দাপট প্রদর্শন অব্যাহত রহিয়াছে।
প্রকৃতপক্ষে গত দেড় দশকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে ও বাহিরে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করিয়া যে প্রক্রিয়ায় বিরোধী দল ও মত দমনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে লাঠিয়ালরূপে বারংবার ব্যবহার করা হইয়াছে, উহার প্রভাবে উক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর এহেন ক্ষমতার দাপট প্রদর্শন আশ্চর্যের কিছু নহে। একই সময়ে এই প্রকার ছাত্রলীগ নেতাকর্মী টেন্ডারবাজি, খুন, অপহরণ এমনকি মারাত্মক অপরাধ ধর্ষণ সংঘটনেও পিছপা হয় নাই। সত্য বটে, জনপরিসরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিভিন্ন সময়ে সংগঠন হইতে অপরাধের সহিত যুক্তদের বহিষ্কার করা হইয়াছে। কিন্তু ইহাও সত্য, বহিষ্কৃত অনেকেই ইতোমধ্যে সংগঠনের পদ-পদবি ফিরিয়া পাইয়াছে। কোনো কোনো ঘটনায় মামলা হইলেও প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষপাতের কারণে খুব কম ক্ষেত্রেই অপরাধীরা সাজা পাইয়াছে। ফলস্বরূপ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ক্রমবর্ধমান হারে নানা অপরাধকর্মে যুক্ত হইয়াছে।
আমাদের প্রত্যাশা, আলোচ্য ঘটনায় অপরাধীদের প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করা হইবে; তৎসহিত বহিষ্কারাদেশও সত্যিকার অর্থে স্থায়ী রূপ পাইবে। দেশের অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের স্বার্থেও বিষয়টি জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি।