প্রাণীরও আছে বাঁচার অধিকার

জালাল উদ্দিন ইমন
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
অপরিকল্পিত নগরায়ণে পশুপাখি অস্তিত্বের সংকটে পড়ছে। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আশ্রয় খুঁজছে চারদিকে। অন্যদিকে শিক্ষার হাতেখড়ি থেকেই ব্যাঙটাকে ঢিল মেরো না; অপ্রয়োজনে গাছের পাতা ছিঁড়ো না, কুকুরটাকে লাথি মেরো না ইত্যাদি শেখানোর কথা থাকলেও, তা খুব একটা মান্যতা পাচ্ছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেও শিক্ষার্থীরা যে পরিবেশ সচেতনতা দেখাতে পারছে না, এরই সাক্ষ্য দিচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
৫০ একরের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ একরের বেশি বনজঙ্গলে পরিপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে এটা ছিল পুরোপুরি জঙ্গল। এখন তাই সরীসৃপসহ বিভিন্ন প্রাণী এ জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো সাপ চোখে পড়ে ক্যাম্পাসে। সঙ্গে সঙ্গো মারতে উদ্যত হয় সবাই। যদিও এখন পর্যন্ত সাপের কামড়ের রেকর্ড নেই।
তবে বিভাগীয় শহর হলেও খবর নিয়ে দেখেছি, বরিশালে অ্যান্টিভেনোম বড়ই অপ্রতুল। সাপের কামড়ের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও যেন ঘুমকাতুরে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা দিতে না পারলে প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে একমাত্র নাপা ট্যাবলেট ছাড়া তেমন কিছু পাওয়া যায় না। জরুরি চিকিৎসা তো নেই-ই। তাই ভয়ার্ত শিক্ষার্থীরা যে কোনো প্রাণী দেখামাত্র লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে যায়। হলগুলোর বিভিন্ন রুমে সাপ দেখা যায়। রাস্তা পার হতে গিয়ে দেখা মেলে শিয়ালের।
এত কিছুর মধ্যে আসলে লাভ তো কারও হচ্ছে না। হত্যা করে সাপের কামড় থেকে পুরোপুরি বাঁচা সম্ভব না। আবার হত্যা করলেই চলে আসে পরিবেশ ভাবনা। জীবনানন্দের কবিতার মতো সেই বরিশালের চেহারা আর নেই। পরিবেশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম সচেতনতা দেখাতে পারছে না। সেই আদিম যুগের মতোই তাদের মাঝে কাজ করে সাপের ভয়। এই অতি মাত্রায় সর্পভীতি দূর করতে হবে।
শিক্ষার্থী ও প্রাণী দুটোকেই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিরাপদ রাখতে হবে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়; যেখানে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানবজীবনে এসবের প্রভাব ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা হয়, সেখানেই যদি বন্যপ্রাণী নিরাপদ বোধ না করে, সমাজের অন্য অংশে তাহলে পরিস্থিতি কত ভয়াবহ, তা সহজে উপলব্ধি করা যায়। মনে রাখতে হবে প্রাণীরও আছে বাঁচার অধিকার, ঠিক যতটা মানুষের। কারণ ওরা না থাকলে মানুষের বিলুপ্তি কেউ ঠেকাতে পারবে না।
শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
- বিষয় :
- বাঁচার অধিকার
- জালাল উদ্দিন ইমন
- প্রাণী