ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ব্যাংক খাতের দুর্দশা কাটিবে কীভাবে

ব্যাংক খাতের দুর্দশা কাটিবে কীভাবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:৫৬ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:৫৬

অর্থনৈতিক দুর্দশা পরিসংখ্যানের ছেঁড়া কাঁথা দিয়া ঢাকিয়া রাখা যাইতেছে না। রিজার্ভের অবস্থা লইয়া বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের মতো মৃদুভাষী মানুষও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করিয়াছেন।

সমকালের মঙ্গলবারের প্রতিবেদন হইতে দেখা যায়, তিনি বলিয়াছেন, রিজার্ভের ‘পতন যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় এবং ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হবে। এ অবস্থায় আইএমএফের ঋণ সহায়তা নাও মিলতে পারে।’ তিনি পরিস্থিতিকে দেউলিয়া হইবার পূর্বের শ্রীলঙ্কার সহিত তুলনা করিয়াছেন। আমাদের আশা বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হইবে না। কিন্তু ব্যাংক খাতের চিত্র সেই আশার গুড়ে শুধু বালি নহে, প্রমাণ আকারের কঙ্কর মিশাইয়া দিতেছে।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ দেখানো হিসাবের চাইতে অনেক বেশি। পুনঃতপশিল ও অবলোপনকৃত ঋণের হিসাব যোগ করিলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাইত। তথাপি ২০২২ সালের হিসাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা উদ্ধারের চিন্তা এড়াইয়া নতুন করিয়া আরও ১৪ হাজার কোটি টাকার অধিক ঋণ পুনঃতপশিল করা হইয়াছে। এই হিসাব যোগ না করিলেও বলা চলে, মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি। এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনমতে ইহার ২৫.৭৮ শতাংশই দুর্দশাগ্রস্ত– অর্থাৎ ফেরত আসিবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ব্যাংক ঋণের ২৫ শতাংশ নিশ্চিত ঝুঁকিতে থাকা বিপৎসীমা অতিক্রমণের লক্ষণ। অথচ সরকার নির্বিকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জবাবদিহির ঊর্ধ্বে।

এই পরিমাণ নয়ছয় অর্থনীতির নিয়মে হয় নাই। বরং নিয়ম শিথিল করিয়া, ক্ষেত্রবিশেষে দুর্নীতি সহায়ক নিয়ম বানাইয়া যথেচ্ছভাবে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। রুগ্‌ণ অর্থনীতিকে আরও পীড়িত করিয়াছে বেনামি ও ভুয়া ঋণ এবং খোলামেলা অর্থ পাচার। হুন্ডি, আন্ডার-ওভারভয়েসিংসহ বহু উপায়ে দেশের প্রাপ্য ডলার বিদেশ চলিয়া যাইতেছে বা দেশেই আসিতেছে না। প্রতিবার জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে এইরূপ কার্যকলাপ দেখা যাওয়ার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অবস্থান বোধগম্য নহে।

এই যখন অর্থনীতির হাল তখন আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সম্ভাবনা কম। ঢাকা সফরকারী আইএমএফ প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব দেখিয়া অসন্তোষ প্রকাশ করিয়াছে বলিয়া সমকাল জানাইয়াছে। 

অর্থনীতির এই দশাকে বিশৃঙ্খলা বা উদাসীনতা দিয়া ব্যাখ্যা করা যায় না। অবস্থা দেখিয়া মনে হয়, আর্থিক খাতকে শুষিয়া লইবার উদ্দেশ্যেই নিয়ম ও অনিয়ম উভয়ই করা হইয়াছে।

ইহার মধ্যে ধাওয়া করিয়া আসিতেছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধজনিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি। রিজার্ভ না থাকায় তেল ক্রয় বন্ধ থাকিবে এবং অর্থনীতির ধমনি শুকাইয়া আসিবার আশঙ্কা নিকটে চলিয়া আসিবে। আর কখন সরকারের হুঁশ ফিরিবে?

আরও পড়ুন

×