ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

প্লাস্টিক কণার আগ্রাসন

প্লাস্টিক কণার আগ্রাসন

.

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৪ | ২৩:৪৪

মঙ্গলবার পত্রিকান্তরে প্রকাশিত বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের একটি নিবন্ধে পরিবেশ, তৎসহিত আমাদের দেহে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি ও প্রভাব সম্পর্কে যাহা বলা হইয়াছে, উহা এক কথায় ভয়াবহ। তথায় বলা হইয়াছে, আমাদের পৌর বর্জ্যের ১০ শতাংশই প্লাস্টিক, যাহার ৪৮ শতাংশ গন্তব্য ভাগাড় এবং ১৫ শতাংশ গন্তব্য নদী ও খাল। ৩ শতাংশের গন্তব্য এমন স্থানে, যথায় কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নাই। ফলে ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) হিসাবে, প্রতি মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের জলাভূমিতে প্রায় আট সহস্র বিলিয়ন প্লাস্টিক মাইক্রোবেডস জমা হয়। স্বাভাবিকভাবেই একদিকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টিসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি হইতেছে, অন্যদিকে খাদ্যচক্রে প্রবেশের মাধ্যমে প্লাস্টিক জমা হইতেছে আমাদের শরীরে। শুধু উহাই নহে, মানবশিশুর জন্য সর্বাধিক নিরাপদ খাদ্য যে মাতৃদুগ্ধ, উহাতেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এমনকি মানুষের রক্ত ও প্লাসেন্টাতেও এই বিষাক্ত পদার্থ বিরাজমান। ইহার অর্থ, অনেক দেশের ন্যায় এই দেশেও শিশু জন্মগ্রহণ করিতেছে 

শরীরের অভ্যন্তরে প্লাস্টিক কণা লইয়া। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদিগের মতে, প্রাথমিকভাবে ইহা মানবদেহের হজম এনজাইমকে বাধা দেয়। ফলস্বরূপ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উদরে জটিলতা সৃষ্টি হইতে পারে। উপরন্তু এক পর্যায়ে ইহা যকৃৎ বা লিভার ও কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে, যাহা ক্যান্সার অবধি গড়াইতে পারে। 

যাহা অধিকতর উদ্বেগজনক, নীতিনির্ধারকদিগের মধ্যে ইহা তেমন মর্মপীড়ার কারণ হয় নাই। বরং উক্ত নিবন্ধে প্রদত্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা’ অষ্টম সংস্করণে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা কিংবা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিককে গুরুতর সমস্যারূপে বিবেচনা না করিয়াই প্লাস্টিক খাতে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হইয়াছে। বিশ্বের ১২৭টি দেশে কোনো না কোনোভাবে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হইলেও বাংলাদেশে উহার লেশমাত্র নাই। অথচ ২০০২ সালে এই দেশেই বিশ্বে সর্বপ্রথম পলিথিন নিষিদ্ধ হয়। সরকার জুট প্যাকেজিং বাধ্যতামূলক ও ১৪টি পণ্যে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার না করার কথা বলিলেও বাস্তবে পলিথিন ব্যতীত চাউল, আটা-ময়দার প্যাকেট দৃশ্যমানই নয়।

সত্য, প্লাস্টিক আমাদের জনজীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত হইলেও একটা বাস্তবতা। রজনীকালেই উহার পরিবর্তন অসম্ভব। কিন্তু আমাদের অস্তিত্বের প্রতি ক্রমবর্ধমান হুমকিস্বরূপ এই বাস্তবতা পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নাই। যাহারা প্লাস্টিককে সস্তা পণ্য মনে করেন, তাহারা নিশ্চয় ইহার ক্ষতি প্রতিরোধে গৃহীত ব্যবস্থাবলির পশ্চাতে বিপুল ব্যয়ের বিষয়টিও জ্ঞাত। অতএব ক্রমান্বয়ে উহার ব্যবহার হ্রাসে আইনের কঠোর প্রয়োগ, তৎসহিত ব্যাপক জনসচেতনতা গঠন সময়ের দাবি। আমরা মনে করি, নিবন্ধটির লেখক যথার্থই বলিয়াছেন, আমরা যদি প্লাস্টিকের পরিবর্তে দেশীয় পণ্য পাট, কাপড়, কাগজ ইত্যাদি ব্যবহার করি তাহা হইলে স্থানীয় শিল্পেরও প্রসার ঘটিবে। 
 

আরও পড়ুন

×